ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত ভুয়া উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে বাসা থেকে শিখিয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে।
রোববার রাতে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ের সামনে ডিবি প্রধান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আরেফী আমাদের বলেছেন, হাসান সারওয়ার্দী (অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী), বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক হোসেন তাকে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করেন। বাস্তবিক, এই সত্য নয়। তারা (বিএনপি) আরেফীকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছে।
তারা বাড়িতে এসে শিখিয়েছিল যে আপনি (আরেফী) বলবেন—র্যাবকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা পেতে সাহায্য করেছেন। এখন পুলিশ, আনসার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকেও নিষিদ্ধ দেওয়া হবে। এই কথাগুলো বললে দেখবেন বাংলাদেশের পুলিশ অফিসাররা নিরাশ হবেন এবং বাংলাদেশের জনগণও হতাশ হবেন।
ডিবি প্রধান বলেন, আরেফী ২০২২ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিনি রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচে থাকেন। সেখানে হাঁটতে হাঁটতে হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা হয় তার। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। এরপর আরেফী চলে যান আমেরিকায়। হাসান সারওয়ার্দী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের আগে আসতে বলেন।
২৬ অক্টোবর আরেফি দেশে এলে হাসান সারওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ হবে, আমি আপনাকে দেখতে নিয়ে যাব। এই বলে তাকে নিয়ে আসা হয়।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, তিনি (আরেফী) তাকে এসব কথা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি (আরেফী) আমাদের বলেছেন, কথাগুলো তার নয়, তাকে শেখানো হয়েছে হাসান সারওয়ার্দী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলালসহ কয়েকজন।
আরেফিকে কথা শেখানোর সময় বিএনপি নেতারা বেশ উৎসাহী ছিলেন। হারুন বলেন, আরেফী জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের বলেছেন, তিনি ভুল করেছেন। এত বড় অন্যায় যে হয়েছে তা তিনি জানতেন না। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলায় পুলিশ নি/হত, শতাধিক আহত। আরেফী নিজেই আমাদের এ কথা জানিয়েছেন।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, আমরা আরেফীর স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। এরপর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কেন তিনি এমন করলেন?
উল্লেখ্য, রাজধানীতে বিএনপির গণসংযোগ ও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সং/ঘর্ষের পর শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক রহস্যময় ব্যক্তিকে দেখা গেছে। ভিডিওতে গোলাপি শার্ট পরা ওই ব্যক্তিকে ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা যায়। যে ব্যক্তি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বলে দাবি করছেন, সেই ভিডিওর খবর প্রকাশ করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা হয়।
রোববার বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত উপদেষ্টা আরেফীকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে থাকেন। তিনি একজন বাংলাদেশী আমেরিকান। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসেন।