Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / জাল বিষয় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

জাল বিষয় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

মাঝে মাঝে সরকারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিদেশ ভ্রমন এবং অত্যধিক ছুটি নেওয়ার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। এমনও দেখা যায় অনেকে ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি যেটা এর আগেও ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া সনদ দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ( Rajshahi University Islam ) ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেশ্বর ডাক্তার সালমা সুলতানা ( Salma Sultana ) এ ধরনের দুর্নীতি এবং নানা ধরনের আচরণের জন্য তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে থাকার অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জেসমিনকেও ( Umm Habiba Jasmine ) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ( night ) রাবি ভাইস-চ্যান্সেলর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের ( Dr. Golam Sabbir Sattar ) সভাপতিত্বে ৫১৪তম সিন্ডিকেট সভায় স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, সালমা সুলতানার বিরুদ্ধে এর আগেও জাল সনদ দিয়ে ছুটি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছুটি বাড়াতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতা”রণার অভিযোগ ওঠে। প্রথমে শিক্ষা ছুটি নিলেও ছুটি বাড়াতে জাল মাতৃত্ব সনদ ব্যবহার করেন। শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য গো’পনের অভিযোগও উঠেছে। বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।

এ প্রসঙ্গে ২০২০ সালের অক্টোবরে ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আহ্বায়ক ড. গোলাম কবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. রেজিনা লজ ও অর্থ বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

জানা গেছে, রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে মো. সালমা সুলতানা ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট দুই বছর ৬ মাস ৭ দিন (শিক্ষা ছুটি, বিশ্রামকালীন ছুটি ও অন্যান্য ধরনের ছুটি) ভোগ করেছেন। এরপর বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধ্যাপক সালমাকে ছুটি দেন। ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ১ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত ৩ দফায় ২ বছর ১ দিনের পূর্ণ বেতনের ছুটি।

অধিদপ্তর পরিকল্পনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বারবার ড. সালমা যখন ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন, তখন তাকে ছুটির বৈধতা এবং গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে তার সুপারভাইজারকে জানাতে বলা হয়। এ সময় তার জার্নাল পেপার সাবমিশন তৈরির কাজ চলছে বলে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু গত ৫ মার্চ ২০১৯ এবং ৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে তার সুপারভাইজার জানায় ড. সালমার রিকমান্ডেশন লেটারটি তার লেখা নয়। এবং ২০১৮ সালেই ড. সালমার সঙ্গে তার সুপারভিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ড. সালমা কর্তৃক রিকমান্ডেশন লেটার দুটি ভুয়া দাবি করেন তিনি।

এদিকে সালমার জন্ম সনদ যাচাইয়ের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিসিয়াল মেইল ​​থেকে সার্টিফিকেটের ছবিসহ একটি ইমেল পাঠানো হয় ড. ডেলের কাছে, যিনি সনদে স্বাক্ষর করেন।

জবাবে ডাঃ ডেল বলেন, এই স্বাক্ষর ও সার্টিফিকেট আমার কিন্তু সালমা সুলতানা আমার কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা নেননি।

20 মে 2019 তারিখে রেজিস্ট্রার অফিস থেকে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল বিভাগে যোগদানের জন্য কারণ সালমা বিভাগের নিয়ম অনুসারে আর কোনও শিক্ষা ছুটির অধিকারী না। পরবর্তীতে কোনো প্রাপক না থাকায় এবং অস্থায়ী মালয়েশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা থেকে চিঠির জবাব অফিসে না পৌঁছায় স্থায়ী ঠিকানা থেকে চিঠিটি ফেরত দেওয়া হয়।

আর তাই গত ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯২তম সিন্ডিকেট সভার ৬৩নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষক সালমাকে চিঠি জারির তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। ১ এপ্রিল ২০১৭ এর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদে যোগদান করতে ব্যর্থ হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বরখাস্ত বলে গণ্য হবে।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক সালমা সুলতানা মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেছেন, লন্ডনে থাকার কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্রিন কার্ড বা নাগরিকত্ব পেয়েছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় অবগত ছিল না।

এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ডা. সালমার স্বামীর চাকরি ছিল লন্ডনে। একসঙ্গে থাকার জন্য তারা অনেক অনিয়ম ও প্রতা”রণার আশ্রয় নিয়েছে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক অধিদফতরের মো. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। পরে তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে। সেখানে সত্যতা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ড. সালমার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। মাতৃত্বের সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

অধ্যাপক সালমা সুলতানার মোবাইল নম্বর ও টেলিফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে অবৈধভাবে কর্মস্থলে থাকা, অনুমতি ছাড়া ছুটি নেওয়া এবং ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে অবস্থানের অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জেসমিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অপরদিকে খারাপ কাজের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারির বিরুদ্ধে। যিনি শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তাকে শাস্তি স্বরূপ আগামী চার বছরের মধ্যে কোনরকম পদোন্নতি দেয়া হবে না, যেটা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপকর্মের অভিযোগ উঠে আসতে দেখা যায়, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *