বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখন অনেকে আদালত থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি মিলছে না। জামিনের কাগজ নিয়ে কারাফটক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আবারও নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আওয়ামী পুলিশ প্রশাসন বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে খেলছে। অবৈধ সরকার যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। জামিনে মুক্তি পেলেও জেলগেটে অপেক্ষমান গোয়েন্দা সংস্থার লোকদেরকে টাকা না দিলে তাদের মুক্তি মিলছে না।
তিনি বলেন, জেলগেটের টাকা না দেওয়ায় অনেক দরিদ্র নেতাকর্মী জেলে জীবন যাপন করছেন। শেখ হাসিনা বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গড়ে তুলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন আওয়ামী নিরাপত্তা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আজ দেড় দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিএনপি কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অবাধ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের অঙ্গীকার কখনই বৃথা যাবে না।
এ সময় তিনি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোরালো আহ্বান জানান।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির ভোট জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক প্ররোচনা-ভদ্রতা এবং স্বৈরাচারী উগ্র ইমেজ-ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ ভোটকেন্দ্রে ভিড় দেখিয়ে সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য হিসেবে পূর্বনির্ধারিত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করবেন বলে জনগণ আগেই টের পেয়েছিলেন। ভোটের দিন তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। তারা নির্বাচন বানচাল করেছে। আর এই জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে গত তিন/চার মাস ধরে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। শারীরিক নির্যাতনে কারাগারে অনেকে মারা যান এবং অনেক নেতাকর্মী পঙ্গু হন। জেল হেফাজতে ও রিমান্ডে নির্যাতন পৃথিবীর সব স্বৈরাচারের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কারও হাত-পা ভেঙে গেছে, কারও হাত-পায়ের নখ কেটে গেছে, কারও চোখ নিভে গেছে পুলিশের শটগানের গুলিতে।
রিজভী আরও বলেন, দুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, ‘ডামি সরকারের’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ উগান্ডায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা আংশিক সত্য। সম্পর্ক গভীর হয়েছে কিন্তু তা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর করতে গিয়ে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার হারিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ভোট না দিয়ে ক্ষমতা কুড়াল, কিন্তু সর্বত্র নৈরাজ্য বিরাজ করছে। উন্নয়ন হলে দেশে গ্যাসের সংকট, বিদ্যুতের সংকট কেন? উন্নয়ন থাকলে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ কেন পরনির্ভরশীল ও আমদানিনির্ভর দেশে পরিণত হলো? বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমান প্রায়ই বলেছেন, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। জনগণের ভোটাধিকার জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত।
তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সঙ্গে বারো কোটি ভোটারের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার দাবিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে। উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও দুর্নীতির মূল হোতা আওয়ামী অলিগলিদের কবল থেকে দেশ মুক্ত না হওয়া এবং জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।