বগুড়া জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের পাবলিক কৌঁসুলি আব্দুল মতিন এ তথ্য জানান।
বগুড়ার গাবতলীতে বিএনপির জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে কটূক্তি করা জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী রোববার দুপুরে নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি আব্দুল মতিন এ তথ্য জানান। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে রনিকে লক্ষ্য করে পচা ডিম ও জুতা ছুড়ে মারে। এ ছাড়া জেলা মহিলা লীগ নেত্রী শবেরাত মুন্নি তাকে (রনি) গালে চড় মারে। এরপর উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ উভয়পক্ষকে শান্ত করে।
জানা যায়, গত ২৭ মে গাবতলী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেন জেলা মহিলা দলের নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনি। পরদিন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান বাদী হয়ে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে গাবতলী থানায় মামলা করলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তা জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননার প্রতিবাদে গত ২৯ মে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিয়ন্ত্রনে আনে। উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। গত ৩১ মে গাবতলী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার পেকার বাদী হয়ে মহিলাদল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনিসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৩৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
সুরাইয়া জেরিন রনি হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। রোববার দুপুরে রনি জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও আইনজীবী ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। তাদের ভয়ে রনি বাথরুমে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আদালত চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ রনিকে হেফাজতে নিয়ে আদালতে হাজির করে। আইনজীবী জামিন চাইলে জেলা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জামিন নামঞ্জুর করে রনিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশি পাহারায় রনিকে আদালত ভবন থেকে প্রিজন ভ্যানে নামানো হচ্ছিল। এরপর জেলা মহিলা লীগ নেত্রী শবেরাত মুন্নি ক্ষিপ্ত হয়ে রনির গালে চড় মারেন। দলীয় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে পুলিশ দ্রুত রনিকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নেয়। এরপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা রনিকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা ছুড়ে মারে। এ অবস্থায় পুলিশ দ্রুত প্রিজন ভ্যানে করে রনিকে জেলা কারাগারে নিয়ে যায়।
বগুড়া জেলা মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শবেরাত মুন্নি জানান, জেলা মহিলা দলের নেত্রী রনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপমান করেছেন। উদ্ধত আচরণের জন্য রনির গালে চড় মেরেছে সে। এর জন্য যে কোনো শাস্তি তিনি নেবেন। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার জন্য মহিলা দলের নেত্রী রনি শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নন, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ ও তাদের দলের নেতারাও। তাই আজ তার দিকে অর্ধশতাধিক পচা ডিম ও জুতা-স্যান্ডেল নিক্ষেপ করা হয়। বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান জানান, আদালত চত্বরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। আদালতের নির্দেশে মহিলাদল নেতা রনিকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে একই মামলায় গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টনসহ তিন নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে বিএনপি নেতাকে লক্ষ্য করে পচা ডিম ও জুতা ছুড়ে মারে। এ ছাড়া জেলা মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শবেরাত মুন্নি মহিলা দলের নেত্রীর গালে চড় মেরেছেন। এরপর উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ উভয়পক্ষকে শান্ত করে।