একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই কর্মসূচি পালন করে আসছে জামায়াতে ইসলামী। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে চায় এই দুই দল।
এ নিয়ে তারা একাধিক বৈঠকও করেছেন। জামায়াতকে সঙ্গী করতে ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের কাছেও দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চ একমঞ্চে আন্দোলনে আপত্তি জানায়। তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতকে একযোগে আন্দোলনে রাখতে রাজি হয়েছেন মঞ্চের নেতারা।
নেতারা বিষয়টি সমাধান করে দ্রুত জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে চান। এর জন্য বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করতে অন্য সমমনা দল ও জোটের কোনো আপত্তি নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একটি দল ছাড়া গণতন্ত্রের মঞ্চের বাকি পাঁচ দল জামায়াতের সঙ্গে এক মঞ্চে আন্দোলনে আপত্তি জানায়।
শুক্রবার ডেমোক্রেসি ফোরামের বৈঠকে এ দুটি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একটি দল ছাড়া গণতন্ত্রের মঞ্চের বাকি পাঁচ দল জামায়াতের সঙ্গে এক মঞ্চে আন্দোলনে আপত্তি জানায়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এক মঞ্চ থেকে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করা সম্ভব বলে মনে করেন না। এমনটা হলে সেই উদ্যোগে মঞ্চ থাকবে না। তাই ওপরেই যুগপতের গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি একত্র হলে গণতন্ত্র মঞ্চের ভূমিকা কী হবে? ৩১ দফার ভিত্তিতে তারা এক বছর ধরে একসাথে রয়েছেন। তারা তাদের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে কর্মসূচিতে থাকতে চায়।
রাজপথে ঐক্য জরুরী। আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একটু বেশি গতি পেলেই সাফল্য আসবে। অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজপথে এ ধরনের ঐক্য গড়ে উঠলে সেই ঐক্য হতে পারে। কিন্তু তারা মনে করেন, ঐক্য এই মুহূর্তে বাস্তবতা নয়।
যুগপৎ যে আন্দোলন হয়েছে তাতে জনগণের সমর্থন পেয়েছে এবং তারা তা গ্রহণ করেছে। চলমান আন্দোলনে রাজপথে জামায়াতের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তাই একত্রিত হলে জামায়াত সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
তবে অন্য দল ও জোটের সমমনা নেতারা বলেছেন, সময় বেশি নেই। তাই ভোট ও মাঠের শক্তি হিসেবে জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের এখনই সময়। অতীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। তাহলে জামায়াতের সাথে বিএনপির আন্দোলনের দোষ কোথায়?
নির্বাচনের আগমুহূর্তে গণতন্ত্রের মঞ্চের আকস্মিক মনোভাব নিয়ে তারা সন্দিহান। সমমনা নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। কিন্তু সেই ফ্রন্ট বিএনপি নেতাদের বিভ্রান্ত করেছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন দলের সিনিয়র নেতাদেরও বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন একটি ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রের মঞ্চ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে তারা আশাবাদী। কারণ মানুষ এই আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উভয় পক্ষই ইতিবাচক। সামনে প্রতিফলিত হবে। গণতন্ত্রের মঞ্চও তাদের মিত্র। তারাও চায় জনগণের মনোভাব, বাস্তবতা-সবকিছু উপলব্ধি করে একটি জোরালো আন্দোলন। তারা বিশ্বাস করে যে বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য সবাই একত্রিত হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না, একতরফা নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক বিশ্বও তাদের সঙ্গে আছে।
জানা গেছে, শনিবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ‘প্রহসন ও ভাগবাঁটোয়ারার’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এজন্য তারা সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েব ডক্টর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দুই দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হয়ে গেলেই বাস্তবে দেখা যাবে।