সম্প্রতি গত কয়েকদিন আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান আনিকা বুশরা বৈচি। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের কয়েকদিনের মাথায় তার করা এক অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, জাবির অফিসকক্ষে এক শিক্ষকের সঙ্গে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষিকার সেলফি ক্যাম্পাসে পোস্টারিং করা হয়েছে। এতে ওই শিক্ষিকার নিয়োগের ক্ষেত্রে সেলফিতে থাকা শিক্ষকের তদবিরের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
জাবির জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি এবং নবনিযুক্ত প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচিকে সেলফিতে বিশেষ ভঙ্গিতে দেখা গেছে।
সোমবার (২১ নভেম্বর) মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও মুরাদ চত্বরসহ বিভিন্ন দেয়ালে সেলফির পোস্টার লাগানো হয়। ছবিতে দেখা যায়, অফিস কক্ষে ললিপপ নিয়ে মাহমুদুর রহমান জনির উরুর ওপর বসে সেলফি তুলছেন আনিকা বুশরা বৈচি। পোস্টারের ক্যাপশনে লেখা, ‘এভাবেই ললিপপের ভেলকিতে শিক্ষিকা হলেন অনিকা বুশরা বৈচি।’
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেটে আনিকা বুশরা বাইচীর নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে গত ৬ নভেম্বর।গুঞ্জন রয়েছে, তার নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সেলফিতে থাকা সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি তদবির করেছেন। বর্তমানে জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাহমুদুর রহমান জনি জানান, ছবিটি বিভাগীয় কার্যালয়ে তোলা। একসময় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। অনেকেই আমার সাথে সেলফি তুলতেন। এটি তেমনই একটি সেলফি। এটি একটি সেলফি মাথায় রেখে উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। বাইচী আমার ডিপার্টমেন্টের ৪২ তম ব্যাচের ছাত্র। আমি শিক্ষক থাকাকালীন তারা থিসিসের ছাত্র ছিল। তাই এই ব্যাচের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি যখন সার্ক ট্যুরে গিয়েছিলাম তখন ডিপার্টমেন্টের সবার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, মাহমুদুর রহমান জনি ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। , জনি প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আড্ডা দেয়। এভাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুই ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে জনি। আনিকা বুশরা তাদের একজন।
তবে জনি জানান, যোগ্যতা প্রমাণ করেই নিয়োগ পেয়েছেন বুশরা। এ ব্যাপারে আমার কোনো প্রভাব নেই।
ছবিটি নিয়ে আনিকা বুশরা বলেন, ছবিটি অনেক পুরনো। যারা এটা ছড়িয়েছে তারা অন্যায় করেছে। এটা এমন কেউ করতে পারতেন যিনি বিভাগের শিক্ষক হতে পারেন না। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই নিয়োগ পেয়েছি।
এদিকে এ ঘটনার আলোকে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তার কানে এসেছে। তবে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি জানিয়েছেন, রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না বলেও জানান তিনি।