গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশ। সরকারি চাকরিতে এই প্রথা বাতিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবি না মেনে শক্তি প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। এরপর তৎকালীন সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানায়। এরপর সরকার বলপ্রয়োগ অব্যাহত রাখলে শিক্ষার্থীদের দাবি ক্রমেই সরকার পতনের পর্বে পরিণত হয়। অবশেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর দলের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ ছেড়ে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের দলীয় মন্ত্রী-এমপি এবং শেখ পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছেন এই জিজ্ঞাসা অনেকের।
জানা গেছে, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শেখ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এখন দেশে নেই। ৫ আগস্টের আগে বা পরে তারা দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ৫ আগস্ট সামরিক বিমানে করে দেশ ত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া ওইদিন পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দেশে ছিলেন না। শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকার পতনের সময় তিনি দিল্লিতে ছিলেন। দিল্লি যাওয়ার পর সায়মা তার মা ও খালার সঙ্গে দেখা করে। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী, লন্ডনে থাকেন। সরকার পতনের সময় শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক দেশে ছিলেন না।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গত ৩ আগস্ট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেন। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড়ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে এ নিয়ে সংগঠনের কারও কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশ আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে গেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেনি বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালে প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন। বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় আছেন বলে জানা গেছে।