সাম্প্রতিক সময়ে সাভারের আশুলিয়ায় এক শিক্ষককে তারই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর পে”টানোর কারণে ঐ শিক্ষক প্রয়াত হন। এই ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ও সমালোচনা শুরু হয়। জানা গেছে, উপজেলার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে বেশ কয়েকটি আ”ঘাত করার পর তিনি গুরু”তর আহ”ত হন। আর এই আঘা”ত করেন ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। এই ঘটনার পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায় সে।
জানা গেছে, প্রেমিকের কাছে হিরোইজম (বীরত্ব) দেখাতে গিয়ে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহ’/ত করে আশরাফুল আহসান জিতু। বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার অধিনায়ক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন জানান, বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে পড়ে জিতু। তিনি তার শিক্ষাজীবন থেকে বিরতি নিয়ে প্রথমে স্কুলে, তারপর মাদ্রাসায় এবং সবশেষে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের সবার কাছে সে একজন দুষ্টু ছাত্র হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও ম’/রামা”রিসহ বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের উ”ত্যক্ত ও বির”ক্ত করতেন।
তিনি স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধূমপান করতেন, স্কুলের ইউনিফর্ম ছাড়াই স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন এবং মোটরসাইকেলে বে”পরোয়া চলাফেরা করতেন। জয়ের জন্য তার নেতৃত্বে এলাকায় কিশোর গ্যাং গঠন করে। এছাড়া গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে আধিপত্য বিস্তার করতেন। কেউ তার বিরুদ্ধে তার পরিবারের কাছে অভিযোগ করলে জিতু তার গ্যাং সদস্যদের নিয়ে তাদের উপর হা”ম’/লা করত এবং এলাকায় ভী’/তিজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সময় হু/’ম’কি-ধাম/কি দেখিয়ে হা’/মলা করত।
তিনি আরও জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে প্রয়াত শিক্ষক জিতুকে স্কুলের এক ছাত্রের সঙ্গে অনিচ্ছাকৃতভাবে আড্ডা দিতে নিষেধ করেছিলেন। এ ঘটনায় শিক্ষকের ওপর ক্ষি/’প্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সে তার বীরত্ব দেখানোর জন্য ছাত্রকে আ’/ক্র”মণ করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫ জুন স্কুলে একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প আনা হয়েছিল এবং এটি ক্লাসরুমের পিছনে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রয়াত শিক্ষক আ/’ঘা”ত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে কলেজ মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জয়ের স্ট্যাম্প দিয়ে আ’ঘা’/ত করতে থাকেন। জিতু প্রথমে শিক্ষককে পেছন থেকে মাথায় আঘা”ত করে পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘা’/ত করে গু”রুতর আহ’/ত করে।
র্যাব জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় অবস্থান করলেও পরে গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। প্রথমে তিনি মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরি টার্মিনালে পৌঁছে ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলায় তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগো”পন করে। পরদিন সকালে তিনি আতাইকুলা থেকে কাজীরহাট লঞ্চ টার্মিনালে বাসে করে আবার অবস্থান পরিবর্তন করে লঞ্চে করে আরিচাঘাটে পৌঁছান এবং সেখান থেকে বাসে করে গাজীপুরের শ্রীপুরের ধনুয়া গ্রামে যান। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেফ”তার করা হয়।
এ ঘটনায় প্রয়াতের বড় ভাই আশুলিয়া থানায় মা”মলা করেছেন। মামলার জবানবন্দিতে জিতুর বয়স ১৮ বছর। তবে র্যাব জানিয়েছে, তারা তার জন্ম সনদ সংগ্রহ করেছে। অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর।
শনিবার বিকেলে সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ফুটবল খেলছিল শিক্ষার্থীরা। মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন প্রভাষক উৎপল। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে এসে উৎপলকে মা/’রধ”র শুরু করে। পরে গু”রুতর আহ’/ত অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। সোমবার সকালে তিনি প্রয়াত হন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা অধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে, যার কারণে অনেক শিক্ষক গুরুতরভাবে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। সাভারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনার পর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এদিকে কিশোর অপরাধ মাত্রাতি”রিক্তভাবে বেড়ে গেছে। যেটা নিয়ে দেশে বিশিষ্ট মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।