রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহিকে জুতা মারার হুমকি দিয়েছে এক যুবক।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক ভিডিওতে তিনি মাহিকে জুতা দেখিয়ে বলেন, আপনার মতো মাহিয়া মাহিকে, এই যে দেখছেন এই জুতা? এই জুতা দিয়ে, একদম জুতা দিয়ে পিটানো উচিত। কারণ, আপনি এমন একটা মেয়ে আপনার মা এই চলচ্চিত্র জগতে যাওয়ার আগে আপনাকে নিষেধ করেছেন।
জানা গেছে, এই যুবকের নাম মাহাবুর রহমান মাহম। বাড়ি তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের কালনা পূর্বপাড়া গ্রামে। বাবার নাম ছদের আলী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে মাহামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে তার কোনো দলীয় পদ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহম এলাকায় দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে হিসেবে পরিচিত। তিনি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের গাড়ি ভাংচুর মামলার আসামি। সেই মামলা এখনও চলছে।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি গত কয়েকদিন ধরে তার প্রচারণায় নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে কথা বলছেন। ফারুক চৌধুরীর নানা বিতর্ক সামনে এনে তাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আর এ কারণেই ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে মাহিকে হুমকি দেন মাহম। তবে কিছুক্ষণ পর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ওই ভিডিও ডিলিট করে দেন তিনি।
ভিডিওতে মাহিয়া মাহিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন মাহম। সিনেমা হলে কারা যায় সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আপনার মতো মাহিয়া মাহির দ্বারা তানোর-গোদাগাড়ীর উন্নয়ন তো দূরের কথা; হাজারো ছেলে নষ্ট হবে। আপনার মতো দুশ্চরিত্রা মহিলা থাকলে। আপনার মতো বেয়াদব মহিলাকে আমি এখনও বলছি, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে আর একটা যদি বাজে মন্তব্য কখনও করেন, আপনাকে জুতা দিয়ে পিটানো উচিত। আপনি ওমর ফারুক চৌধুরীর বাসার কাজের মেয়ের যোগ্য না।’
মাহমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভিডিও প্রকাশের পর রাজশাহী থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করেছিলেন। তারা বিভিন্ন কথা বলছে। তাই ভিডিওটা ডিলিট করে দিলাম।
মাহম বলেন, তিনি নৌকার সমর্থক। কিন্তু এখন তার দলীয় কোনো পদ নেই। এরপর মাহাম মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তানোর সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। অভিযুক্ত পক্ষের সঙ্গে আমার কথা বলার প্রয়োজন নেই। কথা বলিওনি। তবে যাকে নিয়ে কথা বলেছে, সেই পক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। একটা অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ দিলে মাহামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে কে তা দেখা হবে না।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসন থেকে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। তবে ৯৯ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা)। এর প্রতীক ট্রাক। আর নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা ৩ বার নির্বাচিত হন।
রাজশাহী-১ আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বতন্ত্র মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বতন্ত্র মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) এ ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র মো. গোলাম রাব্বানী (কাঁচি প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র মো. আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক) জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল প্রতীক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আল সামাদ (টেলিভিশন প্রতীক), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর প্রতীক)।