গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির দাঙ্গা ও নাশকতার পর এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত এবং তাদের নির্দেশনা দেয় তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে সরকার। সেই অভিযানের অংশ হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুপস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন কে? এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বলেন, শিগগিরই একজন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সে সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার পরিকল্পনা ছিল বলে একাধিক সূত্র জানায়। কিন্তু আমীর খসরো মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর তারিক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। কিন্তু এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিগগিরই মুক্তি না পাওয়ায় বিভিন্ন আপস ও বিশেষ করে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি সামনে এসেছে। সে কারণে মঈন খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে গত রাতে লন্ডনে ড. মঈন খানসহ বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তারেক জিয়া বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে মঈন খানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ড. মঈন খান মাঠের রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নন এবং তিনি কূটনৈতিক মহলে সুপরিচিত। আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, নির্বাচনে যাওয়া, সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরার জন্য মঈন খানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে গেলে অনেক সমঝোতা সংলাপে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে কিছু দাবি নিয়ে যেতে হবে, কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর এ কারণেই মঈন খানকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ এখন শুধুমাত্র স্থায়ী কমিটির সদস্য এই পরিচয় দিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে নীতিগত কোনো আলাপ আলোচনায় যেতে পারছেন না ড. মঈন খান।
মঈন খানের সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসের যে সম্পর্ক তা তার ব্যক্তিগত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অতীতের ঘনিষ্ঠতার কারণে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব না হলে তিনি বিএনপির নীতি নির্ধারক এবং মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত হবেন না। আর এ কারণেই এখন পর্যন্ত মঈন খানকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর ফলে তিনি বিএনপির মুখপাত্র হিসাবে বিভিন্ন কূটনৈতিক বৈঠকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তাছাড়া বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার নাটকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপ আলোচনা এবং সমঝোতা প্রক্রিয়াতেও মঈন খান নেতৃত্ব দেবেন।
তবে শেষ পর্যন্ত কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে না বলে মনে করছেন বিএনপির এক নেতা। কারণ বিএনপি নির্বাচনে গেলে তারা তাদের দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করবে এবং সেক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম সামনে আসবে। কারণ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে না বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সংলাপের শুরুতেই মির্জা ফখরুলের মুক্তির বিষয়টি উঠে আসতে পারে।
সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুলের ব্যাপারে সরকার নমনীয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে সবকিছু নির্ভর করছে লন্ডনে পলাতক ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর। বিএনপিতে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নেই, একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে দল চলে। তাই বিএনপিতে কী হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।