বাংলাদেশ ও মায়ানমার ইস্যু নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে ধারণা করছে মায়ানমার বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করতে চায়। যার জন্য বিভিন্ন কায়দা অবলম্বন করে বাংলাদেশকে যুদ্ধের দিকে আহ্বান করছে। অন্যদিকে মায়ানমার দাবি করছে ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশে কোন প্রকার গোলা নিক্ষেপ করিনি।
এই মর্টার হামলার প্রতিবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একাধিকবার তলব করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত আসার কিছুক্ষণ পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার গাড়িতে ছুটে যেতে দেখা যায়। দৃশ্যটা মজার ছিল। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড মোটেও হাস্যকর নয়। যুক্তিসঙ্গতভাবে মিয়ানমারের অনেক কিছুর জবাব দেওয়ার ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রদূতের দৌড়ানোর কারণ ভিন্ন। তিনি মিডিয়াকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের ওপর সামরিক হা/মলা চালায় মিয়ানমার। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যতম নৃশংস সশস্ত্র বাহিনী, ভালো প্রশিক্ষিত। রাখাইন, শান, কারেন্স এবং কাচিনরা তাদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বন্ধ করার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিপ্রায় নিয়ে সীমাহীন কৌতূহল। এটা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, মিয়ানমার নিজেরাই বা অন্য কোনো শক্তির সহায়তায় হা/মলার পরিকল্পনা করেছে। অনেকের ধারণা, চীনের নির্দেশে এসব হা/মলা বাংলাদেশ ও ভারতে সংকেত পাঠাচ্ছে। ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে। মিয়ানমারের হা/মলা এখনো থামেনি। বরং নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতীয় সংকটের এই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব, প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব এবং পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বা দেশের বাইরে রয়েছেন। একজন নন-ক্যারিয়ার অফিসারের দায়িত্ব তাই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশের প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানানোর। যার কোনো বৈদেশিক বা প্রতিরক্ষা অভিজ্ঞতা নেই। এমওএফএ’র মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেন। বঙ্গোপসাগরে ভারত ও মায়ানমারের বিরুদ্ধে অধিকারের মামলা জিতে বাংলাদেশের ‘সমুদ্র জয়ের’ জন্য সমুদ্র আইনের অধীনে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ হিসাবে ২০১০ সালে এই কর্মকর্তাকে চুক্তির ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনা হয়েছিল।
তারপর থেকে ১২ বছর কেটে গেছে। কিন্তু উপসাগরে কোনো গ্যাস বা তেলের ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তাতে কি? এই বিশেষজ্ঞের ভাগ্য আকাশচুম্বী হয়েছে। তিনি এখন বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদ ভোগ করেন, যা সরকারের একজন সচিবের মতো। উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতো চাকরি থেকে তার অবসর গ্রহণ তার নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে। রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলমকে দেওয়া এসব সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার নিয়োগ ও মেয়াদ কারো জন্য ক্ষতিকর নয় এমন যুক্তি দিয়ে সরে যেতে পারত। এই যুক্তিগুলি অবশ্য বিদেশ মন্ত্রকের দ্বারা নৌ অফিসারকে দেওয়া বিশেষাধিকার রক্ষায় অকার্যকর৷ কারণ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রস্তুত। বিশেষ করে এই সময়ে যখন মিয়ানমার বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে উস্কানি দিয়ে চলেছে।
এটা সম্ভব যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিডিয়াকে এড়িয়ে গাড়িতে ছুটে যেতে চেয়েছিলেন । দেশটির সেনাবাহিনীর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তার সরকারকে জানাতে। জাতীয় সংকটের এমন মুহূর্তে এই অবসরপ্রাপ্ত নৌ-কর্মকর্তার কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ কি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে কোনো বার্তা দিতে পেরেছে? এর আগে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেশাগতভাবে পরিচালিত হতো তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি অলিখিত নির্দেশিকা ছিল।
সে সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে পররাষ্ট্র সচিব প্রতিনিধিদলের অংশ হতেন না। এই নির্দেশের পিছনে নীতি ছিল সাধারণ পরিস্থিতিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেশাদার নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কারো হাতে না থাকে তা নিশ্চিত করা। তবে মিয়ানমার থেকে বর্তমান যুদ্ধের উস্কানি খুবই ব্যতিক্রমী। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ এতদিন বিদেশে অবস্থান করে জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে তার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো শীর্ষস্থানীয় লোকের বিশেষ প্রয়োজন ছিল না। তাদের ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সফর করতে পারতেন। কারণ, এই মুহূর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার যে কারও চেয়ে বেশি কূটনৈতিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তার হাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী করেছেন, তা নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। গুরুত্বহীন প্রস্তুতি না থাকলে বাংলাদেশ করতে পারত। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছিলেন বা করেছিলেন তা আমি জানি না। তবে আমি যা বলতে পারি তা হল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমেডির জিনিস হয়ে উঠেছে। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলে অভিহিত করেন।
মায়ানমারের ছড়া গলা থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে 2 জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এরপর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে থমথমে একটি পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক ঘর থেকেই বেরোচ্ছে না বলে জানা যায়। এছাড়া এই পর্যন্ত অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর ছেড়েছে বলেও সংবাদ সূত্রে জানা যায়।