Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / জানা গেল পদ্মা সেতু নির্মাণে সবথেকে বেশি অর্থ দিয়ে দেশের কোন প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে

জানা গেল পদ্মা সেতু নির্মাণে সবথেকে বেশি অর্থ দিয়ে দেশের কোন প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে

মানুষের মনে থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। আশা বুকে নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। আে তেমনি বাংলার মানুষের বুকে অনেক আশার মধ্যে একটি আশা ছিক পদ্মা সেতু। তারা শুধু গুনতে ছিল অপেক্ষার প্রহর কবে হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেনতেন ব্যাপার ছিল না। তবে সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি জানা গেছে পদ্মা সেযটু নির্মাণে আগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে অগ্রণী ব্যাংক।

আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল প্রতীক্ষিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিনই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই পরিশোধ করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা নিতে হয়নি।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় হচ্ছে ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ২.৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন। বাকিটা স্থানীয় মুদ্রায় দেওয়া যাবে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে আসছে। অন্যদিকে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দেশীয় মুদ্রা (টাকা) ব্যাংকে ফেরত দিচ্ছে সরকার।

অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ব্যাংকের গুলশান শাখায় পদ্মা সেতুর হিসাব খোলা হয়। আর পরের বছর (২০১৩ সাল) থেকে ডলার সরবরাহ শুরু হয়। সেই বছর, ৬.২৬ মিলিয়ন প্রদান করা হয়েছিল।

এর ঠিক পরের বছরই (২০১৪) তা লাফিয়ে বেড়ে ২৭৬.৮৬ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকে। শুধু ২০১৮ সাল (৭২.২০ মিলিয়ন) বাদ দিলে প্রতি বছরই ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত (১৯শে জুন) ৫৩.৪৪ মিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হয়েছে। আর ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অগ্রণী ব্যাংক মোট ১৪৪৯.১৯ মিলিয়ন বা ১.৪৪৯ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে।

গত এপ্রিলে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়লেও মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৩ শতাংশ কমেছে। দেশে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ডলার দেওয়া বন্ধ করেনি অগ্রণী ব্যাংক। বিপরীতে, চলতি মাস শেষ হওয়ার মাত্র ১৯ দিনে (১ জুন-১৯) অগ্রণী ব্যাংক বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি (১৪.৭৯ মিলিয়ন) ডলার প্রদান করেছে। এভাবে নিজস্ব রপ্তানি ও রেমিটেন্স থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে অগ্রণী ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে আসছে। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম মানবজমিনকে আশ্বস্ত করেছেন যে বাকি অন্তত এক বিলিয়ন ডলার অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করবে। শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার দেওয়া নামের চেতনা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্প ও মনোবলের কারণেই আমরা পদ্মা সেতু প্রকল্পে এভাবে সহযোগিতা করতে পেরেছি। জাতির পিতার ‘অগ্রণী ব্যাংক’ নামকরণের স্বার্থকে ধরে রাখতে পেরে আমরা গর্বিত।

আমাদের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. জায়েদ বখতের একটি দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ সহ ১২,০০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবদান রয়েছে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম (বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব), পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সহযোগিতায় সেতু বিভাগের বর্তমান সচিব আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টরা। ‘

শুধু পদ্মা সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে কোনো সমস্যা বা সংকট আছে কি না বা ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে শামস-উল ইসলাম বলেন, ব্যাংক বলেছে বৈদেশিক মুদ্রা দেবে। এটাই ছিল শুরু। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এক ডলারও নিতে হয়নি। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমতে দেইনি। আমরা আমাদের রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত ১৪৪৯.১৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান করেছি। পদ্মা সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় সব বৈদেশিক মুদ্রা আমরা দিচ্ছি। সামনে দিতে পারি। তাই আমরা গর্ব করে বলতে পারি অগ্রণী ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি বড় অংশীদার। কারণ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদ্মা সেতুতে এত বড় ভূমিকা আর কারো নেই। ‘

জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দেশি ও বিদেশি উভয় প্রকার অর্থই পরিশোধ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দেশের উন্নয়নে গৃহীত নানামুখী মেগাপ্রকল্পেই অর্থায়ন করে আসছে অগ্রণী ব্যাংক। ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এই ব্যাংক ১,৭১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল, যেগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে দুই হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া, দেশে প্রথম পিপিপি’র আওতায় নির্মিত ১১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ (রাজধানী ঢাকার) মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও অর্থায়ন করেছিল অগ্রণী ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রীয়াত্ব ব্যাংক। দেশের উন্নয়নের কাজে সাহায্য করা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা অর্থবান ব্যক্তির একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা দেশের উন্নয়ন মানে সবার উন্নয়ন হওয়া। অগ্রণী ব্যাংকের এই সহযোগিতা কখনই ভোলার নয়।

About Shafique Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *