Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / জানা গেল, পদ্মা সেতু খরচ নির্বাহে কোন কোন উৎস থেকে এসেছিল অর্থ

জানা গেল, পদ্মা সেতু খরচ নির্বাহে কোন কোন উৎস থেকে এসেছিল অর্থ

বহু আলোচনা-সমালোচনাকে পিছনে ফেলে অবশেষে আলোচিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হল। প্রধানমন্ত্রীর সাহসি ভূমিকায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান হয়েছে। দুর্নীতির কথা বলে সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। পরে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু আজ বাস্তব রুপ লাভ করেছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতুর খরচ কিভাবে মেটানো নিয়ে যা জানাগেল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ১ শতাংশ সুদে সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে ঋণ দেয়া হয়েছে এই অর্থ। সেতু কর্তৃপক্ষ ১৪৭ কিস্তিতে সুদসহ এই অর্থ পরিশোধ করবে। বিদেশি মুদ্রার জোগান এককভাবে দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।

বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতিহাসে স্থান করে নেয়া বাংলাদেশের অহংকারের এই সেতু নির্মাণে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

বিশাল অঙ্কের এই অর্থ দেশের অভ্যন্তর বা ভেতর থেকে জোগান দেয়া হয়েছে। কোথা থেকে, কিভাবে এলো এই টাকা? কীভাবে খরচ হলো?

অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ১ শতাংশ সুদে সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে ঋণ দেয়া হয়েছে এই অর্থ। সেতু কর্তৃপক্ষ ১৪৭ কিস্তিতে সুদসহ এই অর্থ পরিশোধ করবে।’

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, ১৭ বছরে উঠে আসতে পারে পদ্মা সেতুর এই ব্যয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার যে ব্যয় হয়েছে, তা পাঁচটি প্যাকেজে হয়েছে। প্যাকেজ পাঁচটি হচ্ছে: সেতু নির্মাণ, নদী শাসন, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং দুই পাশের সার্ভিস এরিয়া। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে (অর্থ মন্ত্রণালয়) ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে, কারণ মোংলা পোর্ট এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে, সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি।

‘সেতুর টোল থেকে যে আয় হবে, তা দিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।’

পাঁচটি প্যাকেজে কোথায়, কী খরচ

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার যে ব্যয় হয়েছে, তা পাঁচটি প্যাকেজে হয়েছে। প্যাকেজ পাঁচটি হচ্ছে: সেতু নির্মাণ, নদী শাসন, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং দুই পাশের সার্ভিস এরিয়া।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক শামীম–উজ–জামান বসুনিয়া দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যকে বলেন, ‘মূল সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নদী শাসনের পেছনে খরচ ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, দুই দিকে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর ভ্যাট, ট্যাক্স, বিলসহ অন্যান্য খরচ ৩ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে।’

বিদেশি মুদ্রা সরবরাহ করেছে অগ্রণী ব্যাংক

পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় যে খরচ হয়েছে, তার সবই রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করেছে। একক ব্যাংক হিসেবে তারা এই প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েছে।

এ জন্য গর্বিত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম।

দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যকে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। মাথা উঁচু করে রাখার মতো বিষয়। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। তারই যোগ্য উত্তরসূরী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার ফলে এই সেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’

কোথা থেকে, কীভাবে মেটানো হলো সেতুর খরচ
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় যে খরচ হয়েছে, তার সবই রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করেছে। একক ব্যাংক হিসেবে তারা এই প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিয়েছে।

‘বিশ্বব্যাংককে “না” করে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সে অবস্থায় সেতুর ফরেন কারেন্সি (বিদেশি মুদ্রা) আসবে কোথা থেকে, সে বিষয়ে তখন আলোচনা চলছিল। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, আমরা সব ডলার সরবরাহ করব। পুরো প্রকল্পে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছি। একক ব্যাংক হিসেবে শুরু থেকে আমরা সব ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করেছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ভূমিকাকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফরেন কারেন্সি সরবরাহের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের নীতি সহায়তা দিয়েছে। আমরা যখন প্রস্তাবে রাজি হয়েছি, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তবে অগ্রণী ব্যাংক একাই এই অর্থ নিশ্চিত করতে পারায় দেশের রিজার্ভে কোনো প্রভাব পড়েনি।’

২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংকে পদ্মা সেতুর জন্য এফসি (ফরেন অ্যাকাউন্ট) হিসাব খোলা হয়। ডলার সরবরাহ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত মোট ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে ব্যাংকটি। আরও অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার এই প্রকল্পে জোগান দিতে হবে। সেই বৈদেশিক মুদ্রাও রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংক সরবরাহ করবে বলে জানান শামস-উল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের সহায়তা করেছেন্। তার সঠিক নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুর তৈরী করতে যা খরচ হয়েছে এবং তা কিভাবে মেটানে হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। সেতুর খরচ মোট পাচঁ প্যাকেজের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *