পদ্মা সেতু নির্মাণের দ্বারা উন্মোচন হয়েছে নতুন এক দিগন্তের। পদ্মা সেতু ছিল বাংলার মানুষের কাছে সপ্নের থেকেও অনেক বড় কিছু। কয়দিন আগেও মানুষ ভাবতেন পদ্মা নদীতে সেতু কোনোদিনি সম্ভব না। কিন্তু মানুষের সেই ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্মাণ করলেন পদ্মা সেতু। সম্প্রতি জানা গেছে পদ্মা সেতুর স্থায়িত্বকালথবে ১২০ বছর।
এই সেতুটি সাহস ও যোগ্যতার একটি স্মারক। ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করলে ১২০ বছরেও সেতুর কিছুই হবে না।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, তারা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করবেন। সে অনুযায়ী পরিচালিত হলে স্বপ্নের এই ভবনটি টিকে থাকবে একশ বছরের বেশি।
“আমরা একটি রক্ষণাবেক্ষণ নির্দেশিকা জারি করব,” তিনি বলেছিলেন। কখন কোন কাজ করতে হবে, প্রতিদিন কী করতে হবে, সপ্তাহে একবার কী করতে হবে, মাসে একবার কী করতে হবে, বছরে একবার কী করতে হবে, টানা ৫ বছর কী করতে হবে- এই নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে, তবে, এই সেতুর আয়ু একশ বছরের বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই।
১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।
স্বপ্নের এই সেতুটি গড়ে তিনটি বিশ্বরেকর্ড করে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই মেগা স্ট্রাকচারটি চল্লিশ তলা পাইলিং, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতা এবং নদী শাসনে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে।
স্রোতের বিচারে আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে। অমুক নদীকে বশীভূত করে নিজের টাকায় এমন ভবন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে এর চেয়ে বড় উপলক্ষ আর কী হতে পারে! সেই উৎসবের প্রস্তুতি এখন পদ্মার দুই তীরে।
প্রতিটি স্তম্ভের নিচের মাটি আলাদা ছিল। শেষ পর্যন্ত আমাকে ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইলিং করতে হয়েছিল। পিলারে দশ হাজার পাঁচশ টন বিয়ারিং বিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে, যা বিশ্ব রেকর্ড। আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করে পদ্মাকে বয়ে আনতে হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাত দিনে ৪১৫টি বাতি জ্বালানো হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তবে জমকালো পদ্মা সেতুর স্থাপত্য আলো উদ্বোধনের পর বসানো হবে।
রোড লাইটিং সেতুটিকে রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায় আলোকিত রাখবে। শুক্রবার (১০ জুন) ৭২টি লাইট টেস্টের মাধ্যমে সংযোগ দিয়ে পুরো সেতুর আলোকসজ্জার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
৪ জুন, ২৪ টি ল্যাম্পপোস্টে প্রথম বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এর পরে, প্রতিদিন বিভিন্ন মডিউল এবং আলোর ভায়াডাক্টের উপর পরীক্ষা করা হয়। রাতে আবছা কুয়াশা বা মেঘলা আকাশে বাতি জ্বালানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘প্রকৃতিতে ঘন কুয়াশা বা মেঘলা আকাশ থাকলে অর্থাৎ ম্লান আলো থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতি জ্বলে ওঠে।
১৭৫ ওয়াট এলইডি লাইটের একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব ৩৭ মিটার৷ প্রতি ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বাতাসের গতি সহ্য করতে পারে। মূল সেতুতে ৩২৮টি এবং সংযোগ সেতুর উভয় পাশে ৬টি বাতি রয়েছে। পদ্মার বুকে এই আলোর স্ফুলিঙ্গ উপভোগ করছে পদ্মার মানুষ।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উন্মোচিত হচ্ছে সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার নতুন দিক। কুয়াশা, বড় কোনো ঝড় বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু অবিলম্বে দেখা দেবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাওয়ায় রয়েছে আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র। দুর্যোগের দুই ঘণ্টা আগে তথ্য জানা যাবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, সেতুর মাওয়া প্রান্তে এই আবহাওয়া পূর্বাভাস সাব স্টেশনটি অবস্থিত। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক আগেই সতর্কতা জারি করা হবে। তার মতে, প্রয়োজনে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে কিছু দেখা না গেলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সেজন্য এখানে একটি আবহাওয়া কেন্দ্র থাকবে। আবহাওয়া বুঝে তারা সংকেত দেবে। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী এক থেকে দেড় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হতে পারে।
দেশের 21টি জেলার সঙ্গে একটি স্বপ্নের সংযোগ কেন্দ্রের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ তৈরি করবে। সেই লক্ষ্যে এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে নতুন জীবন দিচ্ছে।
সেতুটি চালু না হলেও ইতিমধ্যেই এই এক্সপ্রেসওয়ের কিছু সুবিধা পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের অপার সম্ভাবনার পদ্মাযাত্রা শুরু হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন হবে।
উল্লেখ্য, ওদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্ব বাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সেতুটি নির্মান করার মধ্যমে এইটাই প্রমাণিত হয়েছে যে আমরাও পারি। আর বর্তমান সরকার সেইটা করে দেখিয়েছে। পদ্মা সেতু তৈরীর দ্বারা উন্মেচিত হলো অনেক নব সুযোগের।