পরিবারের সবাই খুব আনন্দিত ছিল ছেলে বিয়ে করে বাড়িতে পুত্রবধূ নিয়ে আসছে। বাড়িতে বরণ ডালা সাজিয়ে বসে আছেন স্বজনরা। কখন তাদের ছেলে আসবে এবং পুত্রবধূকে বরণ করে ঘরে তুলবেঅ তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। হাসি মুখে আর বরণ করা হলো না পূত্রবধূকে।
রাজধানীর উত্তরায় একটি প্রাইভেটকার একটি বিআরটি গার্ডার চাপায় বেঁচে যাওয়া এক নবদম্পতি অক্ষত রয়েছেন। তাদের উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সোমবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে নববধূ হৃদিয়া ও কনে রিয়া মনিকে স্বজনদের ঘিরে দেখা যায়। তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এন আলম মাসুদ বলেন, শুধু হার্টের ডান পায়ে সামান্য আঘাত রয়েছে। তা ছাড়া দুজনই অক্ষত। তাদের কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। তবে মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
চিকিৎসক মাসুদ বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম ছেড়ে দেব। পরে সড়ক ও জনপথ সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী ও ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম তাদের দেখতে আসেন। তারা ট্রমা কাটিয়ে উঠতে হাসপাতালে আরও কিছু সময় চেয়েছেন। দুজনকেই এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয় ও রিয়া মনিকে ঘিরে আছে স্বজনরা। বেশির ভাগ সময়ই তারা আলাদা। মাঝে মাঝে সে কাঁদছে। হৃদয়ের মা, ভাই ও স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের একটি গার্ডার একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। এতে পাঁচ যাত্রী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও দুই যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রকল্পের কাজ চলাকালীন একটি ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলা হচ্ছিল। হঠাৎ ক্রেনটি গার্ডারের সাথে কাত হয়ে একটি পাসিং প্রাইভেট কারের উপর পড়ে। এতে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
প্রাইভেটকারে সাতজন ছিলেন। সেখানে নববিবাহিত হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), বধূ রিয়া মনিরের খালা ঝর্ণা (২৮), ঝর্ণার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। শুধু হৃদিয়া আর রিয়া বেঁচে আছে।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাইভেটকার থেকে গার্ডকে সরিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তারা লিভার দিয়ে এটি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কাজ না হওয়ায় সাড়ে ৬টার দিকে একটি এক্সকাভেটর আনা হয়। এটি টিল্টিং ক্রেনকে সোজা করে এবং প্রাইভেট কার থেকে গার্ডার সরিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনরা জানান, শুক্রবার হৃদয় ও রিয়া বিয়ে করেন। সোমবার তারা ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুর বাগানের আসরাফুদ্দিন চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায়।
এ ঘটনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। নবদম্পতি অক্ষত অবস্থায় থাকলেও এ ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন পাঁচ জন। এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক বলে জানিয়েছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পদযাত্রা।