কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি 105টি আসনে 50,310 ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৮ ভোট। ফলে রিফাত ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে অতীতে যে দুর্নীতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন। উত্তেজনার মধ্যে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও বিতরণ কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ফলাফল অনুযায়ী, ১০৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট।
বিদায়ী মেয়র সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৪৯,০৯৮ ভোট পেয়েছেন।
তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
ফলাফল ঘোষণার সময় রিফাত নগরীর মনোহরপুরে নিজ বাড়িতে ছিলেন। পরে সাংবাদিকরা এলে তিনি বিজয়-পরবর্তী প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া তাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
মেয়র হিসেবে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করে রিফাত বলেন, “আমি সবার আগে অগ্রাধিকার দেব, আগেও বলেছি, গত ১০ বছরের সিটি করপোরেশনের সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করব, এটাই আমার প্রথম দায়িত্ব। আমি কুমিল্লার জনগণকে কথা দিয়েছিলাম। আমি আমার কথা রাখব।”
কুমিল্লার মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট। এই দুটি সমস্যা সমাধান করতে আমার এক বছর সময় লাগবে। এক বছরে মানুষের এই কষ্টের অবসান ঘটাবো। ”
তবে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, জনাব সাক্কু যদি সাবেক মেয়র হিসেবে এগিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই তার ভালো কাজগুলো মেনে নেবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। তবে নগর ভবনকে আমার দলীয় কার্যালয় করব না। দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করব। সবার জন্য আমার দরজা খোলা রাখব। এটাই আমার অঙ্গীকার। ”
নৌকার বিজয়কে জনগণ ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিজয় আখ্যা দিয়ে রিফাত বলেন, “এই বিজয় আমাদের দরকার ছিল। জনগণ আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছে তাতে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব। দেওয়ার অর্থ হলেও আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব। আ মা র জী ব ন. ”
রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফল (মেয়র পদ)
আরফানুল হক রিফাত (নৌকা)
50,310 ভোট
মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি)
49,98 ভোট
নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া)
29,099 ভোট
রাশেদুল ইসলাম (ফ্যান)
3,040 ভোট
কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)
2,329 ভোট
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লা সিটির ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটারের মধ্যে ১০৫টি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৫টি। ৩১৯টি ভোট গ্রহণ করা হয়নি। ভোট পড়েছে ৫৬.৬৪ শতাংশ।
অর্থাৎ, দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটের পার্থক্য বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যার কাছাকাছি।
এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিফাত দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে গেলেও বিএনপি ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে দলের দুই নেতা সাক্কু ও কায়সার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে যান।
সেই হিসেবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতার (৬৯,০৭) ভোট বিজয়ী প্রার্থী রিফাতের চেয়ে ২৬,৭৫৮ বেশি।
উল্লেখ্য, নির্বচনে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, মনিরুল হক সাক্কু ৬শ’র বেশি ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ওই মুহূর্তে হঠাৎ করেই ফল ঘোষণা বন্ধ হয়ে যায়। ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থী জয়ী হয়েছে দাবি করে বিজয়ের মিছিল করতে থাকে। এ সময় সভাকক্ষে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তবে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর খুব দ্রুত চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ওই অল্প সময়ে একসঙ্গে ১০৫টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন তিনি। রিটার্নিং অফিসার সেখানে প্রার্থীদের চূড়ান্ত সংখ্যা এবং ভোটের ব্যবধান উল্লেখ করেন। এরপর তিনি নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দেন।