নওয়াজ শরীফ চতুর্থ মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও থিংক ট্যাংক। সংবাদ সংস্থা এপি বলছে- ‘পাকিস্তানে ফেরার পর আদালত তার সাজা বাতিল করে, চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার তার পথ পরিষ্কার।’ বিবিসি, গার্ডিয়ান, এএফপি এবং আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরবেন। আজ পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের দিন দেশটির জিও নিউজের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে নওয়াজ শরিফের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। এর আগেও তিনবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তিনি। গত বছর ‘স্বেচ্ছা নির্বাসন’ থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। তিনি সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নওয়াজ শরিফকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের মুখোমুখি হবেন তিনি। দেশের জনপ্রিয় এই নেতা বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। সাইফার মামলায় তার ১০ বছর, তোশাখানা মামলায় ১৪ বছর এবং ‘অবৈধ’ বিয়েতে সাত বছরের কারাদণ্ড হয়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর শীর্ষ নেতা আজকের ৮ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে না জিতলে অবাক হবেন।
এদিকে, ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের অভিজাত ব্যবসায়ী নেতাদের এক সমাবেশে অনেকেই বলেছেন যে তারা একটি ঝুলন্ত সংসদের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যেখানে একটি দুর্বল জোট সরকার গঠন করতে পারে। তাদের অধিকাংশই বলেছেন নওয়াজ শরীফ বা তার ভাই শাহবাজ শরীফ এই জোট সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। শেহবাজও একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্র নীতি ফেলো মাদিহা আফজালকে উদ্ধৃত করে, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে নওয়াজ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন তবে তাকে দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। একটি হল পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আরেকটি হল একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক পরিচালনা করা।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্টতই এগিয়ে রয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সী এই নেতাকে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বিলাওয়াল ভুট্টোর বিরুদ্ধেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
সাবেক সিনিয়র ব্রিটিশ কূটনীতিক ও কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নওয়াজ শরিফ একজন অভিজ্ঞ। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক চাইবেন তিনি।
ইমরান খান জেলে থাকায় বিপরীত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এপি। নওয়াজ শরিফ যখন আইনি মামলা লড়ছিলেন তখন ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এখন ইমরান খান জেলে থাকায় বিশ্লেষকরা নওয়াজ শরিফের আরেকটি জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের মতে, নওয়াজ শরিফ ও তার দল পিএমএল-এনের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। যদি পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) স্বতন্ত্ররা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, তবে এটি একটি বড় চমক হবে।”