সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের হোটেল নারীর সাথে গর্হিত কাজের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার জম দিয়েছে। হোটেলে নারীকে জিম্মি করার মাধ্যমে গর্হিত কাজ করে প্রধান অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম আশিক যার ডাক নাম টর্নেডো আশিক। ভুক্তভোগী ঐ নারী এবং তার স্বামীর মামলা দায়েরের পর ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত টর্নেডো আশিককে আটক করে র্যাবের একটি ইউনিট। জানা গেছে, ঘটনার পর দুইদিন কক্সবাজারে থেকে নিজের চেহারা কিছুটা বদলিয়ে কক্সবাজার ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আশিক। আজ (সোমবার) অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে র্যাবের একজন কর্মকর্তা।
খন্দকার আল মঈন যিনি লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার হিসেবে রয়েছেন তিনি জানান, কক্সবাজারে দুই দিন আত্মগোপনে থাকার পর তাকে পটুয়াখালীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পরে মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে তাকে আটক করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক খারাপ কাজের বিষয়টি স্বীকার করেন। আশিক ও তার সহযোগীরা ওই নারী ও নারীর স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবণী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ভুক্তভোগী নারীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার আশিক ভুক্তভোগীর সাথে খারাপ কাজ করে এবং জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রাখেন।
বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে আশিক আত্মগোপণে চলে যান। এরপর বেশভূষা পাল্টে তিনি দুই দিন কক্সবাজারে আত্মগোপন করেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার টর্নেডো আশিক পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম দখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকেন। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকেন। তাঁর চক্রের সদস্যরা রাতে সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটকদের হয়রা’নি, মোবাইল ছি’নতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতেন। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন পর্যটকদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন।
আশিকের নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অ’/স্ত্র, নিষিদ্ধ দ্রব্য, নারী নির্যা’/তন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ তাকে পাঁচবার গ্রে’ফতার করে। দীর্ঘদিন তিনি কারাভোগ করেছেন। কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি অপরা’ধী চক্রের মূলহোতা ছিলেন আশিক । চক্রে তার নিয়ন্ত্রণে ৩০-৩৫ জন সদস্য কাজ করতেন। পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছি’নতাই, অপহর’ণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদ’খল, ডাকা’তি ও নিষিদ্ধ দ্রব্যের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ডিসেম্বর নারীর সাথে ঘটনার পর ৪ জনের নাম উল্লেখ করে গর্হিত কাজ সংশ্লিষ্ট মামলা করেন ঐ নারীর স্বামী। জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার স্বামী ও তাদের আট মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারে যান ওই নারী। লাবনী সৈকতে দুপুরে কয়েকজন বখাটের সাথে ধাক্কা লাগার পর ঐ নারীর স্বামী ও অপরিচিত বখাটেদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় কয়েকজন বখাটে ঐ মহিলার স্বামী ও সন্তানকে একটি অটোরিকশা করে তুলে নিয়ে যায়। অন্য তিনজন মহিলাকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খারাপ কাজ করে।