স্বামী প্রদীপ কুমার দাস সর্বোচ্চ শাস্তির পরোয়ানা বয়ে বেড়াচ্ছেন এবং অন্যদিকে তার স্ত্রী চুমকি কারণ, যিনি তার সম্পদের ভাগীদার, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন আত্মগোপনে। চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা নামক একটি এলাকায় ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ নামে একটি বিলাসবহুল ছয়তলা ভবনে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে থাকতেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার সেই সময় আলোচিত সিনহার প্রাননাশের কান্ডে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
দেড় বছরের বেশি সময় আত্মগোপনে থাকার পর চুমকি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আত্মসমর্পণ করে চলতি বছরের ২৩ মে দুদকের মামলায় জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকি কারনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ঘোষণা করা হয় আজ। রায়ে প্রদীপ কুমার দাসকে ২০ বছর এবং চুমকিকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকার পর ‘এতদিন চুমকি কোথায় ছিল’ প্রশ্নটি জনমনে এলেও সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দুর্নীতি মামলার যুক্তিতে আসা”মিরা প্রদীপ ও চুমকিকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন।
কারও কারও মতে, চুমকি চট্টগ্রামের কোথাও লুকিয়ে ছিল। তবে বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান। প্রদীপ-চুমকি দম্পতির আগরতলায়, কলকাতার বারাসাত এবং ভারতের গুয়াহাটিতে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তিনি লক্ষ্মীকুঞ্জ ত্যাগ করে সেখানে চলে যান।
পলা’তক অবস্থায় চুমকির কোথায় আছে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার বলেন, আমি মেয়ের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানি না। এ সময় তিনি দাবি করেন, চুমকির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও তিনি জানেন না।
অন্যদিকে, পলাতক চুমকির হদিস নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মন্তব্য ছিল- চুমকি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
২৩ আগস্ট, ২০২০ তারিখে, প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। পরে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি। এতে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিটের ওপর শুনানি হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর মামলার জবানবন্দিতে উল্লেখিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। এই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
এর আগে, জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের জুন মাসে তদন্ত শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও চুমকির নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্যও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। এরপর তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হলে একই বছরের মে মাসে তারা দুদকে বিবরণী জমা দেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াত সাবেক মেজর সিনহাকে প্রাণনাশের ঘটনায় ওসি প্রদীপ কুমারের সাথে আরো পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন সিনহার বোন। এরপর ঘটনার বিষয়ে তদন্তে নামে বিশেষ তদন্ত দল। সেই সময় গ্রেফতার হন ওসি প্রদীপ কুমারসহ অপর পুলিশ সদস্যরা। সেই সময় গ্রেফতার এড়াতে প্রদীপ কুমারের স্ত্রী চুমকি কারণও গা-ঢাকা দেন।