দুর্নীতি দমন কমিশনের সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন ও সংশ্লিষ্ট কমিশনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন বিশিষ্ট আইনজীবী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ‘স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এক প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে শরীফ উদ্দীনকে ‘অজ্ঞাত কারণে’ চাকরিচ্যুত করেন দুদক চেয়্যারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ।
এদিকে, দুদকে শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার সম্পদ থাকার অভিযোগ জমা পড়েছে। পটুয়াখালীতে কর্মরত অবস্থায় এমন অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। যিনি অভিযোগ দিয়েছেন তিনি একটি মোবাইল নম্বরও দিয়েছিলেন সঙ্গে। তবে সেই নম্বরটি ছিল ভুল, ১০ সংখ্যার। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে শরীফের সম্পত্তির খোঁজ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পর্যালোচনা করে দেখেছে শরীফের সর্বশেষ আয়কর নথিও।
শরীফের মা ফিরোজা আক্তারের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘শরীফের বাবা মারা গেছেন ২০২০ সালে। ওনার মৃত্যুর পর প্রায় ৫০ লাখ টাকা পেনশনসহ বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ পেয়েছি আমরা। সেখান থেকে ৩২ লাখ টাকা দিয়ে গত বছর পুরোনো এই ফ্ল্যাটটি কিনেছি। এক হাজার ৪৩০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাটের মালিক আমার চার ছেলে ও এক মেয়ে। এর বাইরে আমাদের কোথাও কিছু নেই।’
এছাড়াও ঘরে বসেই ফোনে কথা হয় শরীফ উদ্দিনের সঙ্গেও। তিনি সম্পদ সম্পর্কে ওঠা অভিযোগ সম্বন্ধে বলেন, ‘শতকোটি টাকার সম্পদ তো দূরের কথা, কেউ কোটি টাকার সম্পদও দেখাতে পারবে না আমার। সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১২ বছর চাকরি করেছি আমি। দুদকে যোগদানের আগে ভেটেরিনারি চিকিৎসক ছিলাম। আমার কোনো বাড়ি-গাড়ি নেই। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি হিসাবে আমার বেতন জমা হয়। সেখানে বাবার পেনশনের কিছু টাকাও আছে।’
সর্বশেষ আয়কর নথি অনুযায়ী, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদ শরীফের। বলেন, ‘আমার বাবার কিছু সম্পদ আছে চাঁদপুরে। প্রায় তিন একর জায়গা পেয়েছি আমরা চার ভাইবোন। সেগুলো এখনও বণ্টন হয়নি। রেলওয়েতে চাকরি করতেন বাবা। অবসরের পর তিনি যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়ে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছে। বাকি টাকা আমার অ্যাকাউন্টে রেখেছেন মা। আয়কর নথিতে এসবের প্রমাণ আছে। আমার নগদ টাকা দেখানো আছে সম্ভবত ২৫ লাখ টাকা।’
সন্তান সম্পর্কে ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ও খুব একরোখা। তবে সততায় সবার সেরা। কোনো দুর্নীতিতে কখনও জড়াতে দেখিনি তাকে। তার বাবাও ছিলেন সততায় অটল। রেলওয়ের বাসা পেতে অনেকে তদবির করতেন। আমার স্বামী কখনোই তদবির করে বাসা নেননি। এই চট্টগ্রামেই ভাড়া বাসায় ছিলাম আমরা ৩০ বছর।’
এ সময় স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেছি। প্রায় ছয় বছর সংসার করছি। কোনোদিন সম্পদ নিয়ে উচ্চাশা দেখিনি তাঁর। সততায় অটল ছিলেন বলে আমাদের বাসার নিচে সাদা কাগজ রেখে তাতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। লিখেছিল, আমাদের দুই সন্তান। তাদের ভবিষ্যৎ আছে। কেন এত বাড়াবাড়ি করি? এসব দেখেও ভয়ে দমে যায়নি শরীফ। সে বলত ঝুঁকি নিয়েই ভালো কাজ করতে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা বিজয়ী হয়েছি ঝুঁকি নিয়ে।’
শরীফের পাঁচ বছর চার মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। ঘুমাচ্ছিল। জেগেছিল তার দুই বছর তিন মাস বয়সী পুত্র সন্তানটি। মায়ের পাশে এক স্বজনের কোলে বসে ছিল। শরীফের স্ত্রী বলেন, ‘আমার কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। এই ছেলে সন্তানের জন্য ইসলামী ব্যাংকে একটি ডিপিএস করা আছে। মাসে চার হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এখন সম্ভবত তিন লাখ টাকা জমেছে আমাদের। কিন্তু গত কয়েক কিস্তির টাকা বকেয়া হয়ে গেছে। মেয়ের নামে প্রগতি ইন্সুরেন্সে একটি বীমা আছে। সেখানে মাসে ছয় হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু কিস্তি বাকি পড়েছে সেখানেও।’
প্রসঙ্গত, শরীফ উদ্দীনকে দায়িত্ব পালনে অব্যাহতি প্রদানের দুইদিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের চেয়্যারম্যান জানান, অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তদন্ত করা ও দুদকের বিভিন্ন নীতিমালা ও আইনকানুন মেনে না চলার কারণে এক পর্যায়ে শরীফ উদ্দীনকে চাকরিচ্যুত করতে সংস্থাটি বাধ্য হয়৷