সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারিনি। আমার জানাজা হবে কিনা জানি না। যদি তাই হয়, সব সুদখোররা যখন টাকা চাইতে আসবে, আমার শরীরটা কেটে ওদের দিয়ে দেবেন। ঝিনাইদহে শুক্রবার বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তার শার্টের পকেট থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে এসব লেখা ছিল।
বিভিন্ন ব্যক্তির ঋণের সুদের চাপে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের পর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম (৫৫)। সে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কয়েক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে হলিধানী এলাকায় মিষ্টান্নের দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। হঠাৎ করে দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকেই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন লোক প্রায়ই টাকার জন্য তার দোকানে এসে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করত।
সিরাজুল ইসলামের পকেট থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ছিল- ‘সুদখোরদের অত্যাচারে আমি বাঁচতে পারিনি। আমার জায়গা-জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া টাকার সাত-আট-দশগুণ টাকা দিয়েও তারা রেহাই দেয়নি। কেউ মামলা করেছেন, কেউ অপমান করেছেন। আমি আর নিতে পারলাম না, তাই চলে গেলাম। আমি জানি না আমার জানাজা হবে কি না। যদি তাই হয়, যখন সমস্ত সুদখোর টাকা চাইতে আসে, তখন আমার শরীর কেটে তাদের দিয়ে দেয়। আল্লাহ এই সুদখোরদের বিচার করবেন। সুদখোরদের নাম বললাম না, তবে তারা সবাই টাকার জন্য আসবে, তাহলে বুঝবেন তারা কারা। আমি ক্ষমার অযোগ্য, কিন্তু আমাকে ক্ষমা করুন।’
সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ছফুরা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, “আমার দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে অনেকের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণ এখন দ্বিগুণেরও বেশি। আমার স্বামী সবসময় এই টাকা পরিশোধে খুব চিন্তিত ছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তারা আমার স্বামীকে নানাভাবে অপমান করে আসছিল। মাঝে মাঝে অনেকেই ফোনে গালিগালাজ করতেন। গত শুক্রবার সকালে টাকার জন্য তাকে চরম লাঞ্ছিত করা হয়। পরে যখন আমরা সবাই বাড়িতে ব্যস্ত তখন আমার স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এসব সুদখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোঃ সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুদ পরিশোধ করতে না পারায় সুদখোরদের চাপে সে আত্মহত্যা করেছে- এমন একটি চিঠি সিরাজুল ইসলামের পকেটে পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।