আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তোড়জোড় শুরু করেছে এবং সেই সাথে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নিজেদের দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। তবে এদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। কবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে জানালেন সিইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ (১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসির মতে, বর্তমান সরকার যে তারিখে প্রথম বৈঠক করেছে তার উপর নির্ভর করে ২০১৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেক প্রস্তুতি, সমঝোতা প্রয়োজন। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইনে যে সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কিছু এখতিয়ার আমাদের আছে। আচরণ বিধিমালা, পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী কাজ করবো।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, একটা বড় অংশ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে তারা নির্বাচনে আসতে চায় না, আসবেও না। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক। অংশগ্রহণ মানে বড় দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন বৃহৎ পরিসরে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বা সমমনা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পত্রিকায় পড়েছি। তাদের নিজস্ব কিছু কর্মসূচী রয়েছে, যা নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রায়ন করবে।
তিনি বলেন, এতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সফল নাও হতে পারে। আমরা হয়তো নির্বাচন করবো। তবে বিএনপি অন্যান্য দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বসতে পারে এবং ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। তাহলে সেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। আমরা সেই প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি না। সেই অবস্থাটা আসেনি। এখনো একটা সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি যে আল্টিমেটিলি বিএনপি কী নির্বাচনে আসছে? না ওই অবস্থাটা সরকারের সঙ্গে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা অবস্থান সৃষ্টি করবে। তারপর নির্বাচন আসবে। তবে তা এখনও অনিশ্চিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন যা করছি তা হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান। তাদের রাজনৈতিক কৌশল ভিন্ন হলে আমাদের বলার কোনো কিছু নেই। তার পক্ষে বা বিপক্ষে আমাদের কোনো অবস্থান নেই। একটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী যেকোনো কৌশল বা কর্মসূচি গ্রহণের স্বাধীনতা রয়েছে। যেহেতু আমাদের কাজ নির্বাচন পরিচালনা করা, তাই যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করতে চাই। সবাইকে বলবো অংশগ্রহণ করে যে সংসদ হবে, সেটা যেন গণতান্ত্রিক হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই তারা যেন জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংসদ গঠন করবেন।
খেলাফাল মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
এদিকে বড় দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও অন্য দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেখানে বিএনপি বাদ পড়ে যাবে আগের নির্বাচনের মতোই। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।