বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা ধরনের তৎপরতা। বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি এখন নির্বাচনকালীন মাঠ তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজ তিনি দিয়েছেন বেশ কিছু নির্দেশনা।জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের কেউ প্রভাব বিস্তার করলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে প্রভাবমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)। আহসান হাবিব খান।
শনিবার (৮ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
ইসি বলেছে, নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। তাদের কেউ কেউ নির্বাচনের সময় পেশী, অর্থ বা ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে। কালো টাকার ব্যবহারও শোনা যাচ্ছে। আপনি আপনার চোখ-কান খোলা রাখবেন এবং এই জিনিসগুলি নিয়ন্ত্রণ করবেন।
আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের গুজব বা ভুল তথ্য ছড়ায় এবং অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। আপনি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। যখন একটি গুজব আবিষ্কৃত হয় বা এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, আপনি দ্রুত গুজবকারীদের চিহ্নিত করবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো গুজব ছড়ানো হচ্ছে কি না, সেই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সতর্কতা বাড়াবেন।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে সংবাদ সংগ্রহে দেশব্যাপী কাজ করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তারা নির্বাচনী এলাকা ও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের খবর সংগ্রহ করে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করে। তাদের কাজে যাতে কোনো বাধা না থাকে তা নিশ্চিত করুন। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে, সেটাই গণমাধ্যমকর্মীরা সারা দেশের মানুষকে দেখাবেন। মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে অযৌক্তিকভাবে বাধা দিলে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। এই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিন।
আহসান হাবীব আরও বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতির সামনে তুলে ধরা। যে কোনো মূল্যে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই। আমরা কোনো বিতর্কিত পছন্দ করার জন্য সমালোচিত হতে চাই না। আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিনীতভাবে বলতে চাই, আপনারা নির্বাচনের সময় আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করুন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। মনে রাখতে হবে, আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের সেবক।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দ্বারা কখনো দলীয় মনোভাব বজায় রাখা বা প্রভাবিত করা যাবে না। প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের দায়িত্ব পালনে আস্থা অর্জন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কখনই এমন আচরণ করা উচিত নয় যাতে অতি উৎসাহী হয়ে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ফৌজদারি বা ফৌজদারি মামলা থাকলে তা আদালতের স্বাভাবিক নিয়মে ভিন্নভাবে চলবে। তবে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বচ্ছ মনোভাব দেখাতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী বা নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন কোনো আতঙ্ক না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই অনুষ্ঠানে আজ উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। বিশেষ করে সারা দেশের ডিসি এসপি রা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের নির্দেশনা মূলক বক্তব্য প্রদান করেন।