ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব, ভারতের উদ্বেগের কারণ কী?

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং তার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। তার চার দিনের সফর নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং দিল্লি প্রশাসন এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, কারণ তাদের কাছে এটা এমন এক সংকেত, যা নিয়ে তারা চিন্তিত।

আনন্দবাজার পত্রিকার “উত্তপ্ত বাংলাদেশ” শিরোনামে জাতিসংঘের মহাসচিবের ঢাকা সফরের খবরটি ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে সহিংসতা ও সংঘাত চলছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।তবে, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন—দেশে নানা মত ও পথের বিরোধ থাকলেও কোনো অস্থিরতা বা উত্তাপের লক্ষণ নেই। বরং, বাংলাদেশে সরকার দেশ পুনর্গঠনের চেষ্টায় ব্যস্ত।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের যেমন আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো শক্তিশালী দেশ ভারতকে পাশে পায়, তেমনি জাতিসংঘও কিছু বিষয়ে ভারতের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ভারতের নানা উত্থাপিত উদ্বেগের মধ্যে প্রধান কারণ হলো, বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া। ভারত হয়তো ভেবেছিল যে কয়েকদিনের মধ্যেই হাসিনাকে তাদের দেশে পাঠানো হবে, কিন্তু তা হয়নি। বরং, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজস্ব অবস্থান নিয়েছে, যা ভারতের পরিকল্পনার পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত সবসময় বাংলাদেশে সহিংসতা এবং নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে, যেমন মানবাধিকার ইস্যু তুলে ধরার মাধ্যমে ঢাকাকে আঘাত করা। তবে, জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টের পর, যা হাসিনার অধীনে গণ আন্দোলন দমন ও হত্যাযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে, তা ভারতীয় নীতির ওপর এক বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করেছে।

অতএব, ভারতের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের প্রকাশ্য সমর্থন এবং হাসিনাকে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা ভারতের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যা তাদের জন্য বিপদ বাড়িয়েছে।


বড় পরিবর্তন বিএনপিতে, হচ্ছেন তিন মহাসচিব

দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিতে তিনজন মহাসচিব থাকবেন। একজন সাংগঠনিক বিষয়ক মহাসচিব, অন্যজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক মহাসচিব এবং অন্যজন প্রশাসনিক বিষয়ক মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মহাসচিবকে দলের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অথবা চেয়ারপারসনের সাংবিধানিক কর্তৃত্ব হিসেবে নিযুক্ত করা হতে পারে। এছাড়াও, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কাঠামোতে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

যুক্ত হতে পারে কো-চেয়ারম্যান পদ। তবে, এটি কেবল দলের জাতীয় সম্মেলন/জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমেই করা যেতে পারে। এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের হাইকমান্ড তারেক রহমান সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা ও তৎপরতা চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত নির্বাচন-পরবর্তী ঐক্যমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলির নেতাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

মনোনয়নে কাদের বাদ দেওয়া হবে এবং কাদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়েও তৎপরতা চলছে। এ ছাড়া দলের ভেতরে কারা মনোনয়ন পাবেন এবং কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন বা কারা কোন পদে থাকবেন – এগুলো নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিজ নিজ কর্মক্ষমতার উপর। দলের সকল নেতার রেকর্ড ইতিমধ্যেই হাইকমান্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগের তালিকায় বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতার নাম যুক্ত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন।

তাছাড়া, যারা পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন এবং নিজেদের দলের সাথে অসৎ ছিলেন তাদের তথ্যও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এই ধরণের নেতারা এবার কোনও অবস্থাতেই মনোনয়ন পাবেন না। ‘খালিদ-পালক বা আরাফাত’-এর মতো পতনশীল আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মন্ত্রী করা তো দূরের কথা, বিএনপি তাদের এমপি পদের জন্যও মনোনীত করবে না। এই ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান খুবই কঠোর। ফলে, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়নে নতুন মুখের সম্ভাবনা বেশি।

ত্যাগী নেতাদের বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন: দলীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি, ত্যাগী নেতাদের দলের বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন শুরু করেছেন তারেক রহমান। কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া দলের গঠনতন্ত্র এবং চেয়ারপারসনের ক্ষমতা অনুযায়ী অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি, যশোর জেলা বিএনপির সদ্য প্রয়াত আহ্বায়ক এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রাক্তন সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম ২০১৮ সালের ২০ মে গঠিত যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি কঠিন সময়ে দলের আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তারা জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। একই সাথে, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই, আরও বেশ কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে জ্যেষ্ঠ পদে নিয়োগ এবং মূল্যায়ন করা হতে পারে।

তরুণ নেতাদের অগ্রাধিকার: সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের সকল স্তরে তরুণ নেতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এবার জেলা কমিটি গঠনে আরও চমক দেখা যাচ্ছে। ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের এই কমিটিগুলিতে আরও বেশি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতাদের নতুন দায়িত্ব বণ্টন করছেন। দলের সূত্র জানিয়েছে যে এর প্রতিফলন পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলে আরও বেশি দেখা যাবে। তাছাড়া, তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনও সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব পেতে পারেন।ইতোমধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার’ এ অংশ নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে।

জানা গেছে, গত দেড় দশক ধরে বিদেশ (লন্ডন) থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশিরভাগ নেতা এখন ব্যক্তিগতভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে পরিচিত। যেকোনো নেতার মর্যাদা এখন তার নখদর্পণে। ফলে তিনি সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, তরুণ নেতাদের উপরও তার অনেক আস্থা রয়েছে। বাস্তবতা এবং বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে তিনি তুলনামূলকভাবে তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগকে বিবেচনায় রেখে দলের বিভিন্ন স্তরে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তরুণ নেতৃত্বের উপর আস্থা রেখে তিনি দলের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হককে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক করেছেন। একইভাবে, রফিকুল আলম মজনুকে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি সভা, কর্মশালা বা সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই কিছু নির্দেশনা দিচ্ছেন। এসব বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুনকে স্থান দেওয়া পুরনোদের কর্তব্য। বিএনপি পুরনো এবং নতুনের সংমিশ্রণে কমিটি দিচ্ছে। পুরনোদের অভিজ্ঞতা এবং নতুনদের কাজের মাধ্যমে দল ও দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাই পুরাতনদের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনদের কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে আসার পথ উন্মুক্ত থাকতে হবে। তাদের সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে। তরুণদের মধ্যে যারা দক্ষ, যোগ্য এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে তারা ইতোমধ্যে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে তরুণ নেতাদের জন্য সুযোগটা আরও বাড়ানো উচিত। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিএনপি আজ একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। তিনি দলকে সুসংহত করার পাশাপাশি দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করছেন। নতুন ও পুরোনোর সমন্বয়ে আগামীতে বিএনপির একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে তিনি বদ্ধ পরিকর।