২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতাসহ চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশনগুলোকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ৩০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ই-মেইলের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। রিজভী চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
রোববার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ চিঠি পড়ে শোনান।
চিঠিতে উল্লেখিত ৩০টি ঘটনার বেশির ভাগই না”শকতাকে ঘিরে। এসব ঘটনার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।
চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে জনগণের জান-মাল, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে।
এদিকে রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই ও আইআরআই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি। এর আগে কয়েকদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের গুলশানের বাসায় কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি।
চিঠিতে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোটারদের ভয় দেখানোর ১০টি ঘটনা তুলে ধরেছে বিএনপি।
একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, গত ২৭ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী ইস্কান্দার তাকে ভোট না দিলে ভোটারদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেন।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার আসনে কোনো বিরোধী দলের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেলে তাকে মা”রধর করা হবে। ভোটারদের সতর্ক করেছেন কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা। ভোটার ও বিএনপির সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ভোটারদের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি দেন।
চিঠিতে রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ আজ একটি অর্থবহ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ চায়।
আসন্ন ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচনের তথাকথিত প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা খোলাখুলি স্বীকার করছেন যে তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিল। পুনরায় একই নাটক মঞ্চস্থ করতে তাঁদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, এটিই স্বাভাবিক।
চিঠিতে চলমান অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি যানবাহন ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওই দিন রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোকজন একটি বাসে আগুন দেয় বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের সামনে আরেকটি বাসে অগ্নিসংযোগের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ ছাত্রলীগ যুবক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। একই দিন কাকরাইলে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে মোটরসাইকেলে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তি। চালকের বর্ণনা অনুযায়ী, যারা আগুন দেওয়া শুরু করেছিল তারা পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ছিল।
গত ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় রাষ্ট্রের একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, এই ঘটনার দুই দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পুলিশ চিঠি দিয়ে ওই দিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিএনপি বিশ্বাস করে-এই নির্দেশনা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। ডিএমপির প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
চিঠিতে, রিজভী আহমেদ ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০টি ঘটনা তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের নিজস্ব বাস লাইন বিহঙ্গ পরিবহনে আগুন দেওয়ার নির্দেশ, এবং একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় তিন ছাত্রলীগ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একই বছরের ১ জানুয়ারি মাগুরায় চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসে আগুন দেয় ছাত্রলীগের সদস্যরা। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকারি বিএল কলেজের ছাত্রলীগ বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাসে আগুন দেয়।