সারা দেশ উত্তাল ছিল বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে। আজ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সেই সমাবেশ। সমাবেশে তারা বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে জানা গেছে সরকারের পদত্যাগ, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি, নিখোঁজ নাগরিকদের উদ্ধার, অন্তর্বর্তী সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ঘোষণা দেন।
মোশাররফ বলেন, বিএনপির সহযোগী রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই ১০ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজকের গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করেছে।
আমাদের সাড়ে চার লাখের বেশি নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে সকল বাধা মোকাবেলা করে আজকের ঢাকা বিভাগীয় গণসভা সফল হয়েছে। ‘
১০ দফার মধ্যে রয়েছে―
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত, শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন বা দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
১০. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
প্রসঙ্গত , বিএনপির করা সমাবেশ নিয়ে বেশ কিছু আশংকা ছিল দলের মধ্যে। বিশেষ করে ঢাকায় শেষ পর্যন্ত সমাবেশ হবে কি না তা নিয়েও ছিল নানা দ্বিধা দ্বন্দ্ব।