Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / জরিপে উঠে এলো ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের বাসভাড়ার পরিমান

জরিপে উঠে এলো ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের বাসভাড়ার পরিমান

হঠাৎ করে দেশের পরিবহন সেক্টরে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিারজ করছে। গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার সমগ্র দেশ জুড়ে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে। এই নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা। এবং এই দাম বৃদ্ধিকে ঘিরে যাতায়াত মাধ্যমে বেড়েছে ভাড়ার পরিমান। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ গুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তেলের দাম এবং বাস ভাড়ার বিষয়ে একটি তথ্য উঠে এসেছে প্রকাশ্যে।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে বাংলাদেশেও ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ায় সরকার। বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবহন খাত। এরপর ডিজেলের দাম কমানো অথবা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে প্রথমে ট্রাক ও পরে বাস মালিক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সে ধর্মঘট রোববার সন্ধ্যার পর তুলে নেওয়া হয়। তবে বাস ভাড়া বাড়ানোর কথা ওঠার পরই এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বাস মালিকদের দাবি, এখনও করোনার ক্ষতি তারা পুষিয়ে উঠতে পারেননি, তারমধ্যে তেলের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে আগের ভাড়ায় বাস চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব না। শেষ পর্যন্ত দূরপাল্লার বাসে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পণ্য ও গণপরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, বর্তমানে পণ্য পরিবহন খাতে তিন লাখ ৫১ হাজার ৭৩টি নিবন্ধিত গাড়ি আছে। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাস রয়েছে ৭৮ হাজার। এসবের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছাড়া দূরপাল্লার বাসের ৬০ শতাংশ গ্যাসে চলাচল করে। আর রাজধানীর প্রায় ৯৫ শতাংশ বাসই চলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে। যদিও ভাড়া বাড়ানোর দাবির ক্ষেত্রে এসবের কিছুই আমলে নেননি পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ভারতে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। সবশেষ গত ৩ নভেম্বর কলকাতায় ডিজেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০১ দশমিক ১৫ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৪ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের তুলনায় দেশটিতে ডিজেলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বেশি থাকলেও সে দেশে কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানেও বাংলাদেশের তুলনায় তেলের দাম বেশি। কিন্তু ওই দুটি দেশের থেকে বাংলাদেশের বাস ভাড়া বহুগুণে বেশি। বাংলাদেশের দূরপাল্লার বাসের ভাড়ার সঙ্গে ভারত ‍ও পাকিস্তানের দূরপাল্লার বাসের ভাড়ার বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে। পাশাপাশি ওই দুটি দেশের বাসের মান ও অবস্থার সাথে বাংলাদেশে চলাচলকারী বাস কোম্পানিগুলোর মান বিবেচনায় নিলেও ভাড়ার পরিমাণে দ্বিগুণেরও বেশি পার্থক্য দেখা যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারতের কলকাতা থেকে পুরির সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। ওই পথে চলাচলকারী গ্রীনলাইন, প্রধান ট্রাভেলস ও শ্যামলী পরিবহন (প্রা.) লি. ভলভো বি-১১আর মডেলের বাস দিয়ে সেবা দিয়ে থাকে। ৪৫ সিট বিশিষ্ট বাস কোম্পানিগুলো এই দূরত্বে ভাড়া নেয় সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার রুপি। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১শ টাকা।

বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। এই পথে চলাচলকারী অধিকাংশ এসি কোম্পানি হুন্দাই, স্ক্যানিয়া ও ভলভো বি-৯আর ব্র্যান্ডের বাস দিয়ে সার্ভিস দিয়ে থাকে। তারা বিজনেস ক্লাস (২৮ সিট) বাসের ভাড়া নিচ্ছে ১২শ টাকা। এসি ইকোনমি ক্লাস (৪০ সিট) ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮শ টাকা। যদিও ইকোনমি ক্লাসের বাসগুলো ভারতের অশোক লিল্যান্ড বা হিনো আর এম-২ মডেলের বাস দিয়ে সেবা দিয়ে থাকে। আর একই পথে গ্রীনলাইন পরিবহন দোতলা বাসের প্রতি সিটের জন্য ১৪শ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। পাকিস্তানের লাহোর থেকে রাওয়ালপিন্ডির দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার। এই রুটে চলাচলকারী রোডমাস্টার ট্রাভেলস এর ৩১ সিটের বিজনেস ক্লাস এসি বাসের ভাড়া ২ হাজার ৯৬০ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় যা ১ হাজার ৪৯৩ টাকা। আর ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব ১৯৭ কিলোমিটার। এ চলাচলকারী নাবিল পরিবহনের স্ক্যানিয়া মালি এক্সেল (২৮ সিট) বিজনেস ক্লাস বাসের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা।

ভারতের মুম্বাই থেকে কাশ্মীর গেটের দূরত্ব ১ হাজার ৪২৯ কিলোমিটার। ওই পথে চলাচলকারী হানস ট্রাভেলস এর এসি স্লিপার বাসের ভাড়া ভারতীয় রুপিতে ৩ হাজার টাকা। ভলভো কোম্পানির ৩২ সিট বিশিষ্ট ওই বাসের বাংলাদেশি মুদ্রায় ভাড়া আসে ৩ হাজার ৪৬৮ টাকা। একই পথে চলাচলকারী রাজ ট্রাভেলেসের ৩৬ সিটের স্লিপারের ভাড়া ২ হাজার ৯৫০ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪১০ টাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এই রুটে চলাচলকারী সবচেয়ে বিলাসবহুল বাস হিসেবে ধরা হয় গ্রীনলাইন পরিবহনের স্ক্যানিয়া ব্র্যান্ডের স্লীপার কোচকে। এই বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা। সেবা ও মানের দিক থেকে ভারতের ওই বাসের থেকে কিছুটা এগিয়ে গ্রীন লাইন। তবুও ভারতের তুলনায় ওই পথের ব্যবধান যেখানে ১ হাজার কিলোমিটারের কম, ভাড়ার ব্যবধান সেখানে কমেছে মাত্র ৯০০ টাকা। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব সাড়ে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি। ওই রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের ৪১ সিট বিশিষ্ট ভলভো বি-১১আর মডেলের মাল্টি এক্সেল বাসের ভাড়া ১ হাজার ১৯৫ রুপি। যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৩শ টাকা। আর গ্রীন লাইন পরিবহনের ৪৫ সিটের ভলভো বি-১১আর মডেলের মাল্টি এক্সেল বাসের ভাড়া ১ হাজার রুপি। বাংলাদেশের মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ১১শ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। কলকাতা-শিলিগুড়ির তুলনায় প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরত্ব কম থাকলেও ঢাকা-কক্স রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের ইকোনমি ক্লাসের (৪১ সিট) ভাড়া নেওয়া হয় সাড়ে ১২শ টাকা। তারা অধিকাংশ সময়ই হিনো আরএম-২ বাস দিয়ে সেবা দিয়ে থাকে। আর প্রায় সমান সুবিধা দিয়ে গ্রীনলাইন পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে সাড়ে ১৪শ টাকা। শুধু তাই নয়, হিনো-AK1j বাসকে এসিতে রূপান্তরিত করে উত্তরের জেলা ঠাঁকুরগাওয়ে সেবা দিয়ে নাবিল পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ১১শ টাকা। পাকিস্তানের লাহোর থেকে করাচির দূরত্ব ১২শ কিলোমিটার। ওই পথে চলাচলকারী ডেইয়ো এক্সপ্রেস এর বিজনেস ক্লাসের (এসি) ভাড়া ২ হাজার ৩২০ টাকা। আর ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহন ও সেন্টমার্টিন হুন্দাই (রবি এক্সপ্রেস) এর বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ১৬শ টাকা। যদিও ওই পথের দূরত্ব মাত্র ২৯২ কিলোমিটার। দূরত্ব ৯০০ কিলোমিটার বেশি হলেও ভাড়ার ব্যবধান মাত্র ৫শ টাকা। ভারতের দিল্লি থেকে মানালির দূরত্ব সাড়ে ৫শ কিলোমিটার। সম্প্রতি দিল্লি থেকে মানালি ঘুরতে গিয়েছিলেন পাঁচ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। রোববার (৭ নভেম্বর) তারা আবার দিল্লিতে ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে আহসান হাবীব রেদোয়ানের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, ওই রুটে ভলভোর ইকোনমি ক্লাসের বাস চলাচল করে। আসা-যাওয়ায় বাংলাদেশি মুদ্রায় তাদের ভাড়া লেগেছে সাড়ে ১২শ টাকার মতো। বাসের অবস্থা সম্পর্কেও স্বস্তি প্রকাশ করেন রেদোয়ান।

বাংলাদেশে বাস ভাড়া বেশি কেন?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামানের মতে, বাসের বিকল্প কোনো বাহনের সহজপ্রাপ্যতা না থাকায় বাংলাদেশের বাস মালিক-শ্রমিকদের আধিপত্য বেশি। তারা দাবি আদায় করতে জনগণকে জিম্মি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘রাজধানী সহ দূরের গন্তব্যে বাসই একমাত্র ভরসা। দূরের যাত্রায় ট্রেন থাকলেও যাত্রী তুলনায় আসন একেবারেই কম। দেখা যাচ্ছে দু-তিন দিন আগেও অনেক রুটে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু চাইলেই বাসের টিকিট মেলে। ফলে বিকল্প কোনো বাহন না থাকায় যাত্রীরা জিম্মি হয়ে যায়।’

ভারত-পাকিস্তানের তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানে ৮০ বছর আগে থেকে করাচি শহরে সার্কুলাল রেল সেবা চালু হয়েছে। ভারতে প্রায় ২০০ বছর আগে সার্কুলার রেল চালু হয়েছে। সেখানে, ট্যাক্সি, ট্রাম এবং মেট্রোরেল আছে। এছাড়া ভারতে দূরের যাত্রায় ট্রেনই সবাই পছন্দ করেন। ফলে বাস মালিকরা চাইলেও যাত্রীদের জিম্মি করতে পারে না।’ তাই বিকল্প বাহনের ওপর জোর দিতে বললেন এআরআই পরিচালক। বলেন, ‘আমাদের দেশে যদি সার্কুলার রেল থাকত, এমআরটি বা বিআরটি যদি থাকত তখন একটা প্রতিযোগিতা আসত। তাহলে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।’ এসময় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে জানিয়ে জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিদ্যুতে চলে এমন বাহনের ওপর নির্ভরশীল হতে জোর দেন এই অধ্যাপক। এছাড়া যানজট, ভাঙা রাস্তা, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি, লক্কড়ঝক্কড় বাস বেশি চলায় তেল খরচও বেশি হয় বলেও জানান হাদিউজ্জামান। যদিও ভাড়া বাড়ানোর পরও খুব একটা খুশি নন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি জানান, গত দুই বছরে ডিজেলসহ অন্যান্য খরচ ও পরিচালন ব্যয় যতটা বেড়েছে, সে তুলনায় ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবুও যতটুকু করা হয়েছে তাতে খরচ কিছুটা উঠবে। এতে যাত্রীদের ওপর চাপ হয়নি বলেও দাবি তার।

অবশ্যে হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে তেলের দাম। বাংলাদেশ সরকার এই চিত্র তুলে ধরে তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে এবং জানিয়েছে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলে সমন্বয় করে দেশের নাজারেও এই দমা কমানো হবে। এক ধাপে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিত্যেপ্রয়োজনীয় অনকে পন্যের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে বেশ কিছু নিত্যেপন্যের দাম লাগামহীন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারন মানুষ চরম দূর্ভূগে পড়েছে।

About

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *