বর্তমান সময়ে বিশ্বের ধনী দেশ গুলোতে অসংখ্য বাংলাদেশী বসবাস করছে। মূলত প্রতিবছরের উন্নত জীবন-জীবিকার জন্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছে। অনেকে আবার স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে অনেক দেশ। যুক্তারাষ্ট্রেও রয়েছে অনেক বাংলাদেশ। সম্প্রতি একটি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে নিউইয়র্কে বসবাসকরী বাংলাদেশিদের দারিদ্রের হার।
স্বপ্নের দেশ আমেরিকার বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক মেট্রো এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের ২০ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে দিনাতিপাত করছে। ২৮ শতাংশ এরমতো বাংলাদেশি প্রায় দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছেন। এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশনের সর্বশেষ জরিপে (২০১৯) এমন উদ্বেগজনক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। চার সদস্যের একটি পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ২৬ হাজার ডলারের কম হয় তাহলে তাদেরকে চরম দারিদ্রের সাথে বসবাসরকারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফেডারেশনের কর্মকর্তা মীরা ভ্যানুগোপাল রবিবার জরিপের বিবরণ প্রদানকালে করোনা পরবর্তী সময়ের জরিপ প্রকাশ পেলে আরো উদ্বেগের তথ্য সামনে আসবে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ফিলাডেলফিয়া, কানেকটিকাট অঞ্চলে বসবাসরত এশিয়ান-আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় বাংলাদেশীরা। এর আগে ২০১০ সালের জরিপের তুলনায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা হাডসন ভ্যালিতে ১৯২%, নিউইয়র্ক সিটিতে ১১২%, নিউজার্সি ও ফিলাডেলফিয়ায় ১৭৬% বাড়লেও দারিদ্র মুক্তির ক্ষেত্রে তেমন হেরফের ঘটেনি। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাসা ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে কারোরই আয়-রোজগার বাড়েনি। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বাফেলো, শিকাগো, বিংহামটন, আপার ডারবি, হিউস্টন, ডালাসে পাড়ি জমালেও পারিবারিক কোটায় নবাগতরা নিউইয়র্কে বসতি গড়েছেন। অর্থাৎ এরা স্বদেশী আমেজে স্বদেশী কালচারে দিনাতিপাত করতে অভ্যস্থ হওয়ায় অর্থ সংকটকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জরিপ পরিচালনাকারিরা উল্লেখ করেছেন।
জরিপে প্রকাশ, মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশই গরিবের চেয়েও গরিবানা হালে দিনাতিপাত করছেন বাংলাদেশি, চায়নিজ, পাকিস্তানী এবং নেপালিরা। তুলনামূলকভাবে ভারতীয়দের অবস্থান অনেক ভালো। বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা লাভের পর নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করেছেন এবং তারা সবচেয়ে দামী এলাকায় বসতি গড়েছেন। যা অনেক আগেই ভারতীয়দের বেলায় ঘটেছে। এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশনের জরিপ পরিচালনাকারিরা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, নেপালি এবং চীনাদের দারিদ্র মুক্তির জন্যে ভাষাগত সমস্যা দূর করার পাশাপাশি জাতিগত ঐক্য সংহত করতে হবে। সাধ্যমত শিক্ষালাভে মনোযোগী হতে হবে। জরিপ পরিচালনাকারিরা পরামর্শ দিয়েছে, বয়স্কদের সেবামূলক কার্যক্রমকে এশিয়ান কালচারে উজ্জীবিত রাখতে হবে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে ১০ বছরের ব্যবধানে চরম দারিদ্রের সংখ্যা ১৫% বেড়েছে। ২০১০ সালে ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার, ২০১৯ সালে তা ২ লাখ ৯০ হাজার হয়েছে। নিউইয়র্ক মেট্র এলাকায় দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারি এশিয়ানের হার ১০.৪%। ২০১০ সালে তা ছিল ৯.২%। জরিপের তথ্যে আরো বলা হয়েছে, এশিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বাড়ছে বাংলাদেশীর সংখ্যা। কঠোর শ্রম দিচ্ছেন, কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথে ধাবিত হতে সক্ষম হচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিটি, স্টেট এবং ফেডারেল প্রশাসনে বিদ্যমান অনেক সুযোগ-সুবিধার সাথে তারা পরিচিত না থাকায় ন্যায্য পারিশ্রমিক দূরের কথা ব্যবসায়িক সুবিধাও হারাচ্ছেন। মূলধারার রাজনীতিতে তারা জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হননি এখনও। ভোটের ময়দানেও পিছিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশীরা। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানোর তাগিদ দিয়েছেন এশিয়ানদের বন্ধু কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং। তিনি এই জরিপের ইতিবাচক প্রসঙ্গে বলেন, অভিবাসী সমাজের নাজুক অবস্থার অনেক কিছুই আমরা জানতে সক্ষম হলাম। এখন সে সব ইস্যুতে সরব হবো।
স্টেট সিনেটর জন ল্যু অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, এশিয়ানরা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা দূর করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার বলেছেন, এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশনের এই জরিপ আমাদের চোখ-কান খুলে দিয়েছে। এশিয়ান আমেরিকান ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক জো-এ্যান ইয়ু বলেন, জনসংখ্যাগতভাবে এশিয়ানদের বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সিটি ও স্টেটের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করতে হবে। ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। হাসপাতাল, স্কুল, অফিসে অনুবাদক রাখতে হবে। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীতেও এশিয়ানদের হিস্যা যথাযথভাবে থাকতে হবে। এবং নিজ নিজ সংস্কৃতির অবয়বে যাতে প্রথম প্রজন্মের এশিয়ানরা অধিকার ভোগ করতে সক্ষম হন সেদিকেও জনপ্রতিনিধিগণকে মনোযোগী হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের দেশ গুলো নানা ধরনের সিযোগ-সুবিধসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর নাগরিকরা। এমনকি ইউরোপের দেশ গুলোর পারিশ্রমিক বৈষম্যতায়ও ভুগছে দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর নাগরিকরা। প্রায় সময় এমন অনেক তথ্য প্রকাশ্যে তুলে ধরছে বিশ্বের অর্ন্তজাতিক মানের নানা ধরনের সংস্থা।