বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলাধীন ক্ষুন্না-গোবিন্দপুর নামক গ্রামে দুই শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া বাড়িও দেওয়া হচ্ছে ভূমিহীন থাকার কারনে পুলিশে চাকরি না হতে যাওয়া আসপিয়া ইসলামকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আসপিয়াকে জমি এবং বাড়ি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসপিয়া ও তার মায়ের নামে জমির দলিল তৈরীর কাজ আরম্ভ হবে আজ রবিবার অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর থেকে। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। জমির দলিল পেলেই সোনার হারিনের মতো পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পাবেন আসপিয়া।
আসপিয়া দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, “হিজলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ইউএনও জমি দেখিয়েছেন। আমি ও আমার মা সেখানে গিয়ে জমি বেছে নিয়েছি। এখন সময় এসেছে জমি খালি করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ শুরু করার। আমি আমার ও মায়ের নামে জমি লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। সেভাবেই জমির দলিল হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমি এখন সেই জমির দলিলের অপেক্ষায় আছি। মনে হয় দলিল পেলে চাকরি পাব।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের কারণেই আমার কথা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তার কাছে পৌঁছেছে। তাদের কারণে এখন আমার এক টুকরো জমি হচ্ছে। আর জমির সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্ন কনস্টেবল পদে চাকরিটাও ধরা দেবে বলে আশা করছি। চাকরিটা পেলে আমার পরিবারের চেহারা পাল্টে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে থাকায় সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতেই কনস্টেবল পদে আবেদন করি। সেই আবেদনে চাকরি হয়েও আবার থেমে গেলো। সেই কষ্টের জায়গা এখন আর আমার নেই। যেভাবে সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে করে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে আমি চাকরিটা পাবো।’
আসপিয়ার মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘জমি না থাকলে চাকরি হয় না, এটা আমাদের জানা ছিল না। আসপিয়া যখন এ সমস্যায় পড়ে, তখন জানলাম বিষয়টি। আগেভাগে জানলে আসপিয়া আবেদনই করতো না। তারপরও চাকরি হয়েও হচ্ছে না শুনে এত খারাপ লেগেছে। মনে হয়েছে আল্লাহ আমাদের ওপর রাগ করে আছেন। তা না হলে মেয়েটা ভালোভাবে নিয়োগ পরীক্ষা পাস করার পরও কেন চাকরি হবে না? এরপর যা হয়েছে তাতো আপনারাই ভালো জানেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যক্তি মোবাইল করে আসপিয়ার নামে জমি দিতে চাচ্ছেন। আসলে আমরা তা গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি, সরকার থেকে যে জমিটুকু দেওয়া হবে সেটুকুই নেবো।’
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘হিজলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের বিপরীত পাশে দুই শতাংশ জমির ওপর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে আসপিয়াকে। ওই জমি আসপিয়া ও তার মা দেখেছেন। এখন জমিতে ঘর উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। ঘর উত্তোলনের আগেই এ সপ্তাহের মধ্যে জমির দলিল তাদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বহু কাজ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ কাজটি সম্পন্নের নির্দেশনা রয়েছে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে সবকটি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন আসপিয়া ইসলাম। সবশেষ ২৯ নভেম্বর ভাইভায় উত্তীর্ণ সকলের ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। এতে করে চাকরির স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আসপিয়ার।
গত বুধবার ডিআইজির সঙ্গে দেখা করলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি বরিশাল পুলিশ লাইন্সের সামনে অবস্থান নেন। দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমে ‘এক খণ্ড জমি না থাকায় চাকরি হলো না আসপিয়ার’ এমন একটি শিরোনামে খবর প্রকাশ পাওয়ার পর সেটা ছড়িয়ে যায় দেশ বিদেশে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। আসপিয়ার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং দেশ-বিদেশের লোকজনের কল আসতে থাকে। আসপিয়ার জমি পাওয়ার আশ্বাস দিতে থাকেন অনেকে। কনস্টেবল পদে চাকরির স্বপ্ন, যা প্রায় বিলীন হওয়ার পথে ছিল, সেটা আবার পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করেছে। এখন সরকার তাকে জমি দিয়ে চাকরির নিশ্চয়তা দিচ্ছে।