বিগত বেশ কিছুদিন যবত নাপ সিরাপ খেয়ে দুই সন্তানের প্রয়ানের ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই ঘটনা পুলিশ ওই সন্তানদের মা রিমাকে গ্রেফতার করে এবং আদালতে সপর্ধ করে। আদালতে অভিযুক্ত রিমার জবানবন্ধিতে ঘটনার মূল বিষয়টা প্রকাশিত হছেয়ে সংবাদ মাধ্যমে। জানা গেছে সোফাই রিমাকে অনেক বার প্রেমের প্রস্তাব দেয় তবে রিমা তাতে রাজি হয় না। তিনি বলেন আমার স্বামি সন্তান রয়েছে তাদের ছেড়ে আমি আপনায় বিয়ে করতে পারব না। তনি আরো বলেন যাদি আমার সন্তান না থাকতো তহলে আমি রাজি হতাম। এ কথা শুনে সোফাহ সিন্ধান্ত নেয় পথের কাাঁটা যাদি সন্তান হয় তাহলে তাদের সরাতে হবে।
ওই মা চরম আর্থিক চাপ, ঋণের চাপ, স্বামীর অক্ষমতা এবং উন্নত জীবনের গ্যারান্টির প্রলোভনে ছিলেন। রাইস মিলের কর্ণধার সোফাই রিমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তার দুই সন্তানকে হ/ত্যার ষ/ড়য/ন্ত্র করে। ‘সর্দার’ সমাজের পিছিয়ে পড়া জীবন সংগ্রামী নারীদের ভালোভাবেই ফাঁ/দে ফেলার টোপ দিতে পেরেছে। অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে রিমা হাসপাতালে গেলে সোফাই সরদারও গিয়ে তাদের দেখাশোনা করেন।
দুই সন্তানের বাবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইসমাইল হোসেন সুজন এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ছেলের মৃ/ত্যুর খবর শুনে গ্রামে চলে আসি। চলে যাওয়ার একদিন পর হঠাৎ রিমা জানায় তার মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে। তখনই আমার সন্দেহ হয়। তখন আমি রিমাকে বলি মোবাইল কোথায় আছে,
আমার ছেলেদের কি হয়েছে, যদি না বলো তাহলে আমি আ/ত্ম/হ/ত্যা করব। একদিন পর রিমা বলল সর্দারের কাছে মোবাইল । এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি জানাই। প্রশাসনের লোকজন এনে রিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
স্বীকারোক্তিতে রিমা বলেন, এক যুগ আগে আশুগঞ্জের ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার অজান্তেই রিমার মা বিয়েটা ঠিক করে দেন। বিয়ের পর জানতে পারেন স্বামীর দৃষ্টিশক্তি নেই্। উনি কোন ধরনের কাজ করতে পারবেন না। বিয়ের ১৫ দিন পর রিমা তার বাবার বাড়িতে গেলে মাকে জানায় তার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব নয়। তখন রিমার মা বললেন, ‘ঝি গো, আমরা গরীব, সংসার চালানোর চেষ্টা কর।’ পরে ইসমাইল রিমাকে তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর ইসমাইলের বাবা-মা তার ভাই বোন রিমাকে গা’লিগা’লাজ করতে থাকে। তিনি রিমা ও ইসমাইলকে আলাদা করেন। আংশিকভাবে ইসমাইল তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমির অর্ধেক বিক্রি করে 130,000 টাকা পান। বিয়ের এক বছর পর রাইসমিলে চাকরি নেন রিমা। কাজ করে স্বামীর জমি উদ্ধার করেন। তবে তখন অনেক ঋণের বোঝা কাাঁধে তার। বিয়ের দুই বছর পর বড় ছেলের জন্ম হয়। তার নাম রহিম। জন্মের দুদিন পর সে মা/রা যায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজে ফিরলেন রিমা। স্বামীর জমি বিক্রি করা অর্ধ শতক জমি ফেরত আনা হয়। এরপর দ্বিতীয় সন্তান ইয়াসিনের জন্ম হয়। দেড় বছর পর তৃতীয় পুত্র মোরসালিনের জন্ম হয়। রিমা সাক্ষ্য দেয়, “আমি একটানা সাত বছর ধরে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করছি।”
দুই সন্তানের মা আরও জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে একাকী জীবনযাপন করছেন। স্বামীকে বাড়িতে প্রস্রাব করতে সাহায্য করতেন রিমা। আগের কর্মস্থল ছেড়ে এস আলম রাইসের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সংসার চালানো কঠিন ছিল।অনেক ঘৃ/ণা করে। 10 হাজার টাকা মাসিক কিস্তি। এক হাজার টাকা বাঁচাতে হয় প্রতি মাসে। এস আলমের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সোফাই সরদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। দুই মাস পরে, সোফি তাকে প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি দুবার প্রত্যাখ্যান করার পরে, সোফি তাকে আরও ভাল জীবনের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। স্বামীর অক্ষমতা ও কঠিন জীবন থেকে মুক্তি পেতে সোফির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। টানা সাত দিন, সোফি এবং রিমা একটি আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলায় একসঙ্গে ছিলেন। রিমা জানান, দুজনে ফোনে কথা বলতাম। হোটেলে যেতে রাজি না হলে সোফায় আমাকে মারতেন। ভালোবেসে তিনি তাকে একটি শ্যাম্পু, একটি লোশন, এক জোড়া জুতা, দুটি কাঁকড়া ব্যান্ড এবং একটি ক্রিম দিয়েছিলেন।
রিমা আরও জানান, চলতি মাসের ৭ তারিখ সোফাই তাকে ডেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। শাশুড়ি বাড়িতে নেই জেনে রিমা মিষ্টি পলিথিন নিয়ে সোফায় যায়। তিনি আরও বলেন, সন্তান দুটিকে বি/ষ মিশ্রিত মিষ্টি খাওয়ালে পথের কাঁটা শেষ হবে। সোফাই রিমাকে ৫টা মিষ্টি দিল। তারপর আবার ফোন করে রিমাকে তার শাশুড়িকে তার কাছে পাঠাতে বলেন। শাশুড়ি চলে যাওয়ার পর রিমা তার হাতে বিলের দুই হাজার টাকা তুলে দেন। টাকা নিয়ে ফেরার পর রিমা তার শাশুড়িকে দুই ছেলের জন্য নাপা সিরাপ আনতে ফার্মেসিতে পাঠায়। তারপর খালি ঘরে সোফাই সর্দারের নির্দেশে দুই ছেলেকে বি/ষ মেশানো মিষ্টি খাওয়ানো হয়। এর মধ্যে শাশুড়ি ফিরে এলে তাদের নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়।সোফি সর্দার তাকে বি/ষ মিশ্রিত মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য দুই ছেলের মৃ/ত্যুর কারণ হিসেবে জ্বরের ওষুধের কথা বলতে শিখিয়েছিলেন। নাপা খাওয়ানোর 10-15 মিনিটের মধ্যে দুটি শিশু বমি করতে শুরু করে। তিনি তাদের মাথায় পানি ঢালতে লাগলেন। এরপর বাচ্চাদের নিয়ে যান মইনুল ডাক্তারের দোকানে। মইনুলের পরামর্শে রিমা তার দুই সন্তানকে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আসল ঘটনা আড়াল করে চিকিৎসককে জানানো হয়, নাপা খাওয়ার পর থেকে দুই শিশু অসুস্থ। জরুরি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আচার মিশিয়ে পানি পান করলে ভালো হয়ে যাবে। এরপর রিমা ও তার শাশুড়ি সন্তান দুটিকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। ছোট ছেলে পথে পানি চাইলে শাশুড়ি দেন। পানি খেয়ে সিএনজি অটোরিকশায় জমে গেল ছোট্ট ছেলেটি। আবার বিছানায় যাওয়ার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার দিন রিমার সঙ্গে সোফাই সরদারের ১৫ বার ফোনে কথা হয়। ফোনকলের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এরপর এলো হ/ত্যার চ/ক্রা/ন্তের কথা।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দুই সন্তানের ভিসা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল সেখান থেকে আটটি নমুনা পরীক্ষা করেছে এবং তাতে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায়নি।
ইসমাইল হোসেনের দায়ের করা মামলায় সোফাইকে আসামি করা হয়। পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা সারাদেশের মানুষে হতবাক করেছে। রিমার এমন ঘটনাকে জন্ম দেয়ায় সারা মা জাতীকে অপমান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এটা পরকিয়া প্রেমের মত নিকৃষ্ঠ কাজের ফল বলে জানিয়েছেন তারা। দুই সন্তানের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। তিনি আরো জানান কর রেকর্ড সূত্রে জানাগেছে সোফাইয়ের সাথে ঘটনার দিন ১৫ বার কথা বলেন রিমা। তিনি আরো জানান যে দোকান থেকে ওই দিন নাপা কেনা হয়েছেল সেখান থেকে প্রয় ৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সব নমুনাই সাভাবিক ছিল। পুলিশ এখনও সোফাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি। তাদের চেষ্টা চলমান।