সম্প্রতি গণফোরামে একটি নতুন কমিটি গঠন হয়। তবে সেই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ড. কামালের বিরোধীরা। জানা গেছে তারা দলের প্রধান উপদেষ্টা ড.কামাল হোসেন এবং ডা. মো.মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নান ধরনের সমালোচনা। অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে ড. মিজান বলছে এক কথা আর ড, কামাল হোসেন বলছেন আর এক।
এ বিষয় নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, গণফোরামের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনকে বরখাস্ত এবং দলের সব পদ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা ভিত্তিহীন, প্রশ্নবিদ্ধ ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ।
গণফোরামের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান একসংবাদ কর্মীর সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নেতৃত্ব দেন ড. মোস্তফা মহসিন মন্টু। কামাল হোসেন ও মিজানুর রহমানকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জোগলুল হায়দার আফ্রিক।
এ প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম । আমি শুনেছি ২০২১ সালের মন্টুর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে আমাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি তাদের কোনো সভায় উপস্থিত ছিলাম না। আমি কাউন্সিলেও উপস্থিত ছিলাম না। যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না এবং স্বাক্ষরও ছিল না সেখানে আমার বহিষ্কার না হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি জানি না কেন তারা আমাকে কমিটিতে রেখেছে।
মিজান বলেন, ড. কামাল হোসেন সেখানে উপস্থিত হননি এবং কাউন্সিলে তাদের সমর্থনও করেননি। তারা কামাল হোসেনের কাছে শুভেচ্ছা জানতে চাইলেন, তাই তিনি পরিষদকে শুভেচ্ছা জানান। অভিবাদন এবং পরামর্শ এক জিনিস নয়। শুভেচ্ছা পত্রে কোথাও বলা নেই যে এটি গণফোরামের কাউন্সিল। এ কারণে কামাল হোসেন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন যে, তাদের কাউন্সিলের সঙ্গে আমার দল গণফোরামের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
গণফোরামের অপর অংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কামাল হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে তিনি যে অভিনন্দন বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা আমাকে এবং মোকাব্বিরকে তার ব্যক্তিগত প্যাডে দেওয়া হয়েছিল।
মিজানের অভিযোগের ভিত্তিতে ডা. তিনি কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমরা যদি মিজানকে কমিটিতে থাকতে বাধ্য করি তাহলে দীর্ঘদিন পর কেন তিনি তার পদ প্রত্যাহার করে অভিযোগ করেননি? প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি কোনো চিঠি দেননি এবং পত্রিকায় কোনো ঘোষণাও দেননি।
কামাল হোসেন আমাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে নির্বাচন কমিশন বলেছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হবেন তারা কমিশন মেনে নেবেন। আপনি কাউন্সিল হয়ে আসেন।
৬ষ্ঠ কাউন্সিলের শুভেচ্ছা। কামাল হোসেন তার নিজের প্যাডে বলেন, বর্তমান গণফোরামের প্রিয় নেতাকর্মীরা, আমার সালাম নিন। আমি আমার অসুস্থতার কারণে আপনার সামনে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে পারছি না, তবে আমি জাতীয় কাউন্সিলের এই বৈঠকের জন্য আপনাকে আমার আন্তরিক স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাই এবং আপনার সাফল্য কামনা করছি। আমি সবসময় ঐক্যের কথা বলেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণফোরামের সকল নেতা-কর্মী ও সমর্থক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে আশা করি। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি। শুভেচ্ছা ডঃ কামাল হোসেন (স্বাক্ষর সহ)।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ গণফোরামে ড. কামাল অংশে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি ও ড. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেনকে দলের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের পদসহ দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন ও মিজানুর রহমান যে কমিটি ঘোষণা করেছেন তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক।
এ বিষয় নিয়ে ড, কামাল হোসেনেরবিরোধীরা আরো বলেন, আপনারা ( গণফোরামের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী) বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ রইলো। আমারা তাদের (কামাল হোসেন ও মিজানুর রহমান) কমিটি কোন ভাবেই মেনে নিবনা। মিজানুর রহমানকে অব্যাহতিদেওয়ার কারন সম্পর্কে তারা বলেন, মিজান সভাপতি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েও গণফোরামের নির্বাচিত কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে এই কমিটিকে সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করেন। যার জন্য কামাল হোসেন ও ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।