বাংলাদেশে হাতে গোনা এমন কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন, যাদেরকে এক নামেই চিনে থাকেন ফেলেন সকলেই। আর তাদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম জাহাঙ্গীর কবির। চিকিৎসায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। তবে সম্প্রতি এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ তাকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে অর্গানিকো কেয়ার নামক একটি কোম্পানির ‘ঘি’ -এর মান ও এবং প্যাকেজিংয়ের ত্রুটির কারণে আলটিমেট অর্গানিক লাইফ নামে আরেকটি সংস্থাকে জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছে। জরিমানাকৃত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উল্লেখিত চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবির। তবে চিকিৎসকের দাবি, অভিযুক্ত ঘি তার কোম্পানির নয়।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব দাবি করেন। তবে ভোক্তা অধিকার বলছে, জাহাঙ্গীর কবির গোডাউনে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদনহীন ঘি বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাতে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছিল না। এ কারণে তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির দাবি করেন, ‘ঘি নিয়ে তারা (ভোক্তা অধিকার) যে অভিযোগ দিয়েছেন তা আমার কোম্পানির নয়, অর্গানিকো কেয়ারের। ফলে মিডিয়ায় আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আমি আবারও বলছি, মিডিয়াতে যেমন চিত্রিত করা হচ্ছে যে আমার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে, এটি এমন নয়। যে পণ্যটি জরিমানা করা হয়েছে সেটি অর্গানিকো কেয়ারের। এটা আমাদের গোডাউনে রেখে বিক্রি করি।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ যদি ওই ঘি নিয়ে হয়, তবে তা অর্গানিকো কেয়ারের। এছাড়াও, যতদূর আমি জানি, ভোক্তাদের অভিযোগ শুধুমাত্র প্যাকেজিং সম্পর্কে। কিন্তু তারা মানের বিষয়ে অভিযোগ, প্রশ্ন বা মন্তব্য করেননি। তাদের যে সমস্যাটি দেখা গেছে তা হলো প্যাকেজিং ঠিকানা গাজীপুরে দেওয়া হলেও তারা এখানে প্যাকেজিং করেছে। এটা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। এ ক্ষেত্রে ওই ঘি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে জবাবদিহি করতে হবে। শুধুমাত্র আমার গোডাউনে বিক্রি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার কোম্পানি আলটিমেট অর্গানিক লাইফকেও জরিমানা করা হয়েছে।
পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, তারা আমাদের কোম্পানির যেসব পণ্য দেখেছেন তার জন্য আমরা তাদের ইউএসডিএ সার্টিফাইড অর্গানিক কফি বিনের সার্টিফিকেট দেখিয়েছি। তারা বলেন, এগুলো আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের কোনো পণ্য নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে কিছু প্রাকৃতিক পণ্য রয়েছে, যেগুলো দেশীয় ও প্রাকৃতিক বলে জানা গেছে। তাদের কোথাও কোনো অর্গানিক টেক্সট নেই। অর্থাৎ আমরা যে পণ্যগুলোকে অর্গানিক বলেছি সেগুলোর সার্টিফিকেট দেখিয়েছি। আর আমরা স্বাভাবিকের জন্য বিএসটিআই-এর অনুমোদন সনদ দেখিয়েছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই প্রচারণায় শুধু আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। কিছু গণমাধ্যম বলেছে, অবৈধ ও অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির জন্য আমাকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যেখানে ভোক্তা অধিকার এসেছে, সেখানে ওষুধ ছিল না। গোডাউনটি মূলত জৈব ও দেশীয় পণ্য। তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই এমন খবর প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম।
পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, এ প্রেক্ষাপটে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব। আমরা খুব শীঘ্রই ঘি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করব।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কার্যালয় প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডাঃ জাহাঙ্গীরকে কাগজপত্রসহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে তলব করা হয়েছে। তার কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা তা শুনব।
গতকাল বুধবার গোপন তথ্যের আলোকে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম দেখতে পেয়ে তা দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে এ ঘটনায় বেশ বিব্রত জাহাঙ্গীর কবির। ওই ঘি তার কোম্পানির নয় বলেও দাবি করেন তিনি