সম্প্রতি গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অফিস শেষে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ঢাকায় মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের প্রকৌশলী শাহরিয়ার কবির। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো হদিস না পেয়ে শেষমেষ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানায় একই জিডি করেন শাহরিয়ার মা রাশিদা আক্তার সাহান।
ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সে পাগল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে।
ওর বাবা মারা গেছেন। এ ছেলে যদি না ফিরে আসে আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলবেন। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। ’
শাহরিয়ার এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) হিসেবে কর্মরত। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশল অধ্যয়ন করেন। লালবাগের আজিমপুর টাওয়ারে একমাত্র মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা রানীবাজার এলাকায়।
শাহরিয়ার কবিরের মা রাশিদা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ১৩ বছর ধরে আজিমপুরে বসবাস করছি। রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় অফিসের গাড়ি বাসার নিচে আসে। কোনো রকম রুটি খেয়ে শাহরিয়ার দৌড় দেয়। এরপর বিকাল ৫টায় চলে যায়। অফিসে একা একা বাসায় ফেরেনি।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।অফিস থেকে বের হলেও মোবাইল,ল্যাপটপ,ব্যাগ কিছুই নিয়ে যায়নি।পরে রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আজকে বানালাম। তুরাগ থানায় একটি জিডি। এছাড়া বিষয়টি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, শাহরিয়ার বুয়েটে পড়াশোনা শেষ করে মেট্রোরেলে চাকরি পান। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল মেট্রোরেল নির্মাণ করা। এ জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও মেট্রোরেলের সঙ্গে কাজ করছেন। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। বাবা অসুস্থ হলে হাসপাতালে দৌড়ানো সহ তিনি একাই সবকিছু করতেন। ছেলের সাথে সময় কাটাতাম। রান্নাবান্না সহ সবই ছিল ছেলের জন্য। আমি আমার ছেলেকে ছাড়া বাঁচব না। ‘
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৌদুত হাওলাদার বলেন, সোমবার শাহরিয়ার কবিরের মা রাশিদা আক্তার সাহান থানায় একটি জিডি করেছেন।এছাড়া এমআরটি প্রকল্পের পক্ষে উত্তরা ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক একরামুল কবির হাওলাদারকেও আসামি করা হয়েছে। জিডি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহরিয়ার কবির তার অফিস থেকে একা বের হন। অফিস কক্ষে নিজের মোবাইল ও ল্যাপটপও রেখে যান তিনি। আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে এবং কার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। ‘
এদিকে নিখোঁজের দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ছেলের কোনো খোঁজ না মেলায় রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শাহরিয়ার কবিরের মা। প্রতিনিয়তই যেন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি।