রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বেশ আগে থেকেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতায়ের পরিমাণ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বেড়ে গেছে। এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কলেজ ছাত্রীর মোবাইল ছিনতাই করার পর ছিনতাইকারীকে ধরে বেধড়ক পেটালেন ওই কলেজছাত্রী নিজেই। এ ঘটনার পর ওই কলেজছাত্রী পুলিশের উপরও ক্ষোভ ঝাড়লেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী পারিশা আক্তার একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশে দিলেন। সাহস আর প্রতিবাদী মনোভাব থাকলে যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়, তা আবারও প্রমাণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অসীম সাহসিকতায় একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন তিনি। তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। উপস্থিত শত শত মানুষ তার সাহসিকতা দেখে হ’তবাক হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে ছিনতাইকারীকে ধরার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটে। প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে অপরাধীদের ধরতে পারিশা এখন দেশজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন।
ঘটনার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম পরিশার সাথে ছিলেন। তারা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন সকালে তিনি একটি থিসিসের কাজে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন। কাজ শেষে বিকেলে বাসে করে পুরান ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। বাসটি কারওয়ান বাজারের কাছে আসলে বাইরে থেকে এক ছিনতাকারী বাইরে থেকে ছোঁ মে”রে তার মোবাইল ফোনটি। পারিশা তখন ফোনে কথা বলছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক পারিশা দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়। তিনি বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীকে খুঁজতে লাগলেন। এরই মধ্যে ভিড়ের মধ্যে ছিনতাইকারী অদৃশ্য হয়ে যায়।
পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পারিশার সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, পারিশা যখন তার মোবাইলের ছিনতাইকারীকে খুঁজছিলেন, ওই সময়েই শিক্ষার্থী ঘটতে দেখেন আরেক ছিনতাইয়ের ঘটনা। অপর একজনের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো আরেক ছিনতাইকারী। সঙ্গে সঙ্গে ঐ ছাত্রীর হাতে ধরা পড়ে ঐ শিক্ষার্থী। এ সময় কেউ এগিয়ে না আসায় পারিশা একাই তাকে বেধড়ক মা’রধ”র শুরু করে। তখন ডাকাত মাটিতে লু”টিয়ে পড়ে। এ সময় তাকে মোবাইল ফোন হারানোয় এই ছিনতাইকারীর ওপর রাগ ঝাড়তে দেখা যায়। বিক্ষু”ব্ধ পারিশার চিৎকারে আশপাশের বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। এ সময় পারিশা ছিনতাইকারীর কাছে থাকা ফোন থেকে কল করে অপর ছিনতাইকারীকেও ধরে ফেলেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে ছিনতাইকারিদের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে আট”ককৃত দুই ছিনতাইকারীসহ থানায় অভিযোগ করতে ঐ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ওপর ক্ষো”ভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তার ভাষ্যমতে, একজন ছি”নতাইকারী ধরার পর তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে অন্য একজনকে ধরে ফেলেন। তিনি দুই ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরপরও যদি পুলিশ তার ফোন উদ্ধার করতে না পারে, তবে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না।
পরীর সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম জানান, থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারা। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ছাত্রীর শাওমি ব্র্যান্ডের পোকো এম-৩ মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শাহ আলম যিনি তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি এ সম্পর্কে বলেন, এ ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে চুরি যাওয়া মোবাইলটি এখনো পাওয়া যায়নি। মোবাইলটা উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে আশা করা যায় শীঘ্রই মোবাইলটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।