ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র আভ্যন্তরীন কোন্দলে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নতুন না হলেও ইডেন কলেজে সাম্প্রতিকালে এ ঘটনা প্রায় ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তবে ইডেন কলেজের বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে একের পর মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়া বিয়ষটি ভিন্ন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তারা সুন্দরীদের ছবি তোলেন, ব্যবসা করাতে চান’ ইডেন শিক্ষার্থীর বি/স্ফোরক তথ্য প্রকাশ করে যা বললেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী।
আধিপত্য বিস্তার, সিট বাণিজ্য, সাধারণ ছাত্রীদের হেনস্তাসহ নানা হয়রানির খবরে বারবার আলোচনায় আসে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ। এসব বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় এবার সংগঠনের এক নেত্রীর ওপর চটেন সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই নেত্রীকে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগে তামান্না ও রাজিয়াকে বহিষ্কারের দাবিতে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অন্যপক্ষের নেতাকর্মীরা।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী গণমাধ্যমকে বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে জান্নাতুল ফেরদৌস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছিলেন। এরপর আয়েশা সিদ্দিকা হলের সামনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ১০ থেকে ১৫ জন তার ওপর হা/মলা চালায়। দুই জুনিয়র মেয়ে তার সাথে ছিল। তাদের সবার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে বকুলতলায় বসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে এই ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি।
কলজটির ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন সহিংস আচরণ নতুন নয় জানিয়ে বৈশাখী বলেন, আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের রুমের মেয়েদেরকে তারা নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু মেয়েরা তো তাদের কাছে নিরাপদ মনে করেন না। কারণ তারা ওই মেয়েদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করাতে চান।
তিনি বলেন, বৈধ রুমের মেয়েরা উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির অনুসারীরা তাদের ছবি তুলে রাখেন। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হয় কোন মেয়ে সুন্দরী। এরপর মেয়েদের রুমে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে হু/মকি দেওয়া হয়। খারাপ উদ্দেশ্যে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিছু দিন আগে একজন মেয়ে কান্না করতে করতে এ বিষয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে আমাদের প্রশাসন, শিক্ষক, হল প্রভোস্টরা সবই জানেন।কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ। কারণ এর আগে রিভা আপার সম্পর্কে একটি অডিও ফাঁস হয়েছিল।সেখানে আমাদের অধ্যক্ষ ম্যাডামকে নিয়ে তিনি বলেছেন যে ম্যাডামের নাকি কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা ছাত্রলীগের সভাপতি রিভার কাছে। কিন্তু তখন আমরা এর প্রতিবাদ করিনি। কারণ আমরা দল করি। আর আমরা চাই না দলের সুনাম ক্ষুন্ন হোক।
বৈশাখী আরও বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিন দিন এমন বৈরি আচরণ মেনে নেয়া যায় না। দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদেরকে ছাত্রলীগের প্রতিনিধি বানানো হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য। সেখানে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে যদি সিট বাণিজ্য, মেয়ে বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করি, তবে তো ইডেন কলেজেরও বদনাম হবে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে নিরপেক্ষভাবে আমি এই বিষয়টা মানতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, ছাত্রীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করায় ছাত্রলীগ সভাপতি কিন্তু বিষয়টি জানলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। তবে ছাত্রলীগ সভাপতির দাপটে কলেজে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাওয়া প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানায় ওই নেত্রী।