বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নাম হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আর এই ছাত্র সংগঠনের নাম ভাঙিয়েই অনেকেই গড়েছেন অনেক সম্পদ। যার আরো একটি উদাহারন পাওয়া গেল সম্প্রতি। নাম এইচ এম শওকত। পেকুয়া উপজেলার বারকিয়া ইউনিয়নের দিনমজুর নান্না মিয়ার ছেলে মো. তিনি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এমনকি তিন বছর আগেও, তাকে গতি পেতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল, এখন তার সংগ্রহে দুটি বিলাসবহুল ‘প্রাইভেট’ গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি দামী বাইক রয়েছে। কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন। জিরো ভিটাই বানিয়েছে কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল অফিস। বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। যেন আলাদিনের চেরাগ খুঁজে পেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শওকত।
ইয়া’বা ব্যবসা, চাঁ’দাবাজি, আত্মসাৎ ও প্রতারণার মাধ্যমে শওকত টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের দায়ের করা অভিযোগেও শওকতকে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক দাবি করা হয়।
সম্প্রতি পেকুয়া বাজারের ১২০ জন ব্যবসায়ী ছাত্রলীগ নেতা শওকতের চাঁদাবাজিতে বিরক্ত হয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। স্কুল মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অনেক মেয়েই এখন শওকতের বেতনভোগী দলের কিশোর-কিশোরীদের ইফটিজিংয়ের কারণে গৃহবন্দী।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে শওকতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা! উল্টো পেকুয়া ও জেলা পুলিশের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দখল নিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় সংসদ সদস্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শওকতকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতার পরামর্শে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর গঠিত কমিটিতে শওকত রাতারাতি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পদ ভাগাভাগি করতে সক্ষম হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই শওকতের খ্যাতির উত্থান কেউ মার খেয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর আগে ১০ থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে না পারায় শওকতের এখন সংগ্রহে রয়েছে দুটি বিলাসবহুল প্রাইভেট ‘পাজেরো’ গাড়ি ও বেশ কয়েকটি দামি বাইক। মাত্র দুই বছরে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন শওকত। বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগের পাশাপাশি বেনামে কোটি টাকার জমি কিনেছেন। সম্প্রতি পেকুয়া বাজারে জুবাইদা কনস্ট্রাকশন (মায়ের নামে) নামে তিন থেকে চার কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল রড সিমেন্টের দোকান খুলেছেন। গত বছর প্রায় আড়াই কোটি টাকায় পেকুয়া বাজার ইজারা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া চলতি বছর পেকুয়া বাজারের আগে জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এসএম গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির পাশে দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি ক্রয় করেন তিনি। তিনি পেকুয়া বাজারের এসডি ডেভেলপমেন্টের পেছনে দুটি খনি ক্রয় করেন, যার আনুমানিক মূল্য ৩ থেকে ৫০ কোটি টাকা। এর আগে মুজিবসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছে স্থানীয় লায়ন। গ্রামে কোটি কোটি টাকার ভবন তৈরি হচ্ছে। পেকুয়া বাজারে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল অফিস। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে শওকতের এই ঘটনায় এখন তোলপাড় সব খানেই। সকলেই এ নিয়ে তুলছেন নানা ধরনের প্রশ্ন। কিভাবে এত কিছুর মালিক হয়েও এখনও স্ব-দর্পনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তা নিয়ে করছেন কৌতুহল।