সারা দেশে আবারো ছাত্রলীগের নাম শুরু হয়েছে নানা ধরণের আলোচনা সমলোচনা। একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে এই ছাত্রলীগ। আর এরই মাঝে এবার জানা গেলো নতুন খবর। টাকার বিনিময়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বগুড়ার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্রেটারি সৈয়দ আলী ইমাম বাকেরের একটি অডিও কল রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এই সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
৫৪ সেকেন্ডের ওই অডিও কলে ছাত্রলীগ নেতাকে বলতে শোনা যায়, হিসাব মিটিয়ে কমিটি দেবেন। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার কথা বললেও সেখানে তার হিসাব মেটানোর কথাও বলেছেন তিনি।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের অনেক পদচ্যুত নেতা শুরু থেকেই কমিটি ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ করে আসছেন। এ কারণে কমিটি ঘোষণার পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ফাঁস হওয়া অডিও কল রেকর্ডিং শোনার পর বগুড়ার একাধিক ছাত্রলীগ নেতা নিশ্চিত করেছেন যে এটি সৈয়দ আলী ইমাম বাকেরের অডিও।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আলী ইমাম বাকের: ওয়ালাইকুমুস সালাম (শুরুতেই সালামের জবাব দেন)।
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: ভাই কি বাসায়?
আলী ইমাম বাকের: আমি তো বাসায় না, বাইরে ভায়া।
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: ও। আপনার সঙ্গে একটু দেখা করার দরকার ছিল।
আলী ইমাম বাকের: কেমন হলো বগুড়ার খেলাটা?
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: আমি তো জানি আপনারা এই খেলাটা খেলবেন। এটা কি নতুন? আপনারা কোন জিনিস হাতে নিয়ে ব্যর্থ হইছেন? আমি তো দেখিনি। যাই হোক, শোনেন। আপনি বগুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। আজিজুল হক কলেজের কমিটি করবেন না?
আলী ইমাম বাকের: করুম দেখি
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: ওখানে আমার ছোট দুই ভাই আছে। আপনার সঙ্গে একটু বসি। যেই থাক না কেন বিদায় বেলাতে দেইখা লন, বাইছা লন।
আলী ইমাম বাকের: আগে আমার নিজের হিসাব-নিকাশ না মিলালে আমি কারও ব্যাপারে সুপারিশ করবো না।
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: হিসাব-নিকাশ মিলবোনি। আপনি কই আছেন বলেন, আমি একটু দেখা করবো।
আলী ইমাম বাকের: আমি আগারগাঁতে আছি। তুই ক্যাম্পাসের দিকে থাক, আমি এসে ফোন দিচ্ছি।
জনৈক ছাত্রলীগ নেতা: তাহলে আমি ক্যাম্পাসের দিকে থাকতেছি। আপনি আসেন।
এই অডিও ফাঁসের ঘটনায় বগুড়া কমিটির সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে নেতা নির্বাচনের জন্য অন্তত ২৫-৩০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতা বগুড়া কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রন্থাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকেরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। শেষ কলটি ছিল 8:18 PM এ কিন্তু ফোনটি বন্ধ ছিল।
জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাশরাফি হিরো বলেন, যারা টাকার বিনিময়ে সংগঠন বিক্রি করে তারা দলের জন্য সত্যিই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। কল রেকর্ড শুনে ভাবতে অবাক লাগে। নেতা এমন অযোগ্য লোকদের নির্বাচিত করার বাণিজ্য করবে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু বলেন, ‘সবকিছু দেখে ও শুনে যে কারো সন্দেহ হবে এটাই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগের মতো সংগঠনে টাকা দিয়ে নেতা নির্বাচন করা হবে, এটা দুঃখজনক।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ১২ মে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। তবে সাত বছর পার হলেও সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের ১৫ দিনের মধ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে ২ ফেব্রুয়ারি শহীদ টিটু মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ৫৬ নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। সেখানে দ্রুত কমিটি গঠনের আশ্বাসও দেন নেতারা।
এ দিকে ৯ মাস পর এই কমিটি ঘোষণা নিয়ে এমনিতে রয়েছে নানা ধরনের ক্ষোভ। তার মধ্যে এ ধরণের ফোনালাপ ফাঁস আরো বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।