অন্যায়কারী যতই ক্ষমতাসীন হোক না কেন একদিন তার সাজা ভোগ করতে হয়। তেমনি ঘটনা ঘটেছে শাহিন আলমের সাথে। বন্ধুসুলভ বিজনেস পার্টনার কে অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় নিথর করার ঘটনায় পলাতক ছিলেন প্রায় ছয় বছর। আদালত তাকে মৃ/ত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল। তবে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে এতদিন পলাতক থাকা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হলো না তার। অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়তে হলো তাকে।
২০০৬ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শহিদুল ইসলাম হ/ত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আসামি শাহিন আলম (৩৮) মানিকগঞ্জকে গ্রেফতার করে র্যাব। ছয় বছর আত্মগোপনের পর সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধরা পড়েন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে শহিদুল ইসলাম ও আসামি মো. শাহীন আলমের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। শাহিন আলম ভিকটিমকে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলে ২০০৪ সালে ঢাকার ধামরাই থানার গোয়ারীপাড়ায় ‘বাংলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত এনজিওর মুনাফা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে, শাহীন ভিকটিমকে কিছু অর্থের প্রস্তাব দিয়ে এনজিওটি দখল করতে চায় সমস্ত লভ্যাংশ ভোগ করতে। কিন্তু ভুক্তভোগী রাজি হননি। অভিযুক্ত শাহীন ভিকটিমকে হ/ত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার ২০-২৫ দিন আগে, শাহীন তার চাচাতো ভাই টাঙ্গাইলের সন্ত্রাসী রাজা মিয়ার সাথে ভিকটিমকে হ/ত্যার পুরো চিত্রটি এঁকেছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৬ সালের ২০ মে ঘটনার দিন শাহীন অফিসের বিভিন্ন কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে তার কনে দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তিনি জানান, তার চাচাতো ভাই ও অন্য আসামি সাহেদ, কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার ও ড্রাইভার রহম আলী টাঙ্গাইল থেকে আসবে। ভুক্তভোগীকে তাদের সঙ্গে কনে দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। রাত হয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগী রাজি না হলে অভিযুক্তরা তাকে বাড়িতে নামিয়ে দেয় এবং তার কনেকে দেখতে যেতে বলে। এরপর ভিকটিম সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে তাদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা শহিদুলকে শ্বাসরোধ করে নি/র্মমভাবে হ/ত্যা করে।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ২০০৬ সালের হ/ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নামকরা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হ/ত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর ২৩ মে এনজিওর দুই নারী কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানান, অভিযুক্ত শাহিনের এনজিওর মালিকানা নিয়ে ভিকটিম শহিদুলের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ শাহীনকে আটক করলে আসামি শাহীন হ/ত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তিনি বলেন, আসামি শাহীন আলম ১০ বছর কারাভোগের পর ২০১৬ সালে জামিনে আত্মগোপন করেন এবং মামলায় হাজির হননি। মামলার তদন্ত শেষে দুই আসামি শাহিন আলম ও সাহেদকে গ্রেফতার করে এবং পলাতক আসামি রাজা মিয়া, এ. কুদ্দুস, বিষ্ণু সুইপার, রহম আলী চালক ও মাইক্রোবাস মালিক সেলিমসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ড. শাহিন আলমকে মৃত্যুদণ্ড এবং শাহেদ, রাজা মিয়া, আবদুল কুদ্দুস ও বিষ্ণু সুইপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহিন আলম গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। সে বিভিন্ন ছদ্মবেশে পেশা পরিবর্তন করে রংপুর, আশুলিয়া, পল্লবী, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে আসছিল। শুরুতে তিনি ফেরিওয়ালা, গার্মেন্টস অপারেটর, রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, স্যানিটারি ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে এই ভয়ে সে তার পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই উদ্দেশ্যে সোমবার রাতে স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে আসেন তিনি।
তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে র্যাব-৪ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তিনি আরও বলেন, ৬ বছর ধরে বিভিন্ন ছদ্মবেশে আটক এই আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
ফের তাকে আদালতে প্রেরন করা হতে পারে। তার সাজা পূর্ণবহাল থাকবে কিনা সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নতুন করে মামলাটি আদালতে প্রেরণ করার পর সমস্ত তদন্ত এবং পূর্বের রায় বিশ্লেষণ করে আদালত নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।