সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় হ্যালোইন উৎসবকে কেন্দ্র করে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা কথা শেয়ার করলেন নুহিল আহমেদ নাম এক ভারতীয় নাগরিক। নিজের চোখের সামনের মানুষের মৃত্যু হতে দেখলেও কিছুই করার ছিল না তার। জীবন বাঁচাতে বারবার সৃষ্টি কর্তার নাম নিচ্ছিলেন তিনি।
‘পেছন থেকে ঢেউয়ের মতো মানুষ আসতে শুরু করে। চোখের সামনে মানুষকে দমবন্ধ হয়ে মরতে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। গতরাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। এখনো মনে হচ্ছে, আমার সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় হ্যালোইন উৎসবে দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি এভাবেই বর্ণনা করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী নুহিল আহমেদ। ভিড়ের মধ্যে নুহিলও ছিল। কিন্তু রাস্তার পাশে একটি সিঁড়ি বেয়ে তিনি বেঁচে যান।
শনিবার স্থানীয় সময় আনুমানিক ১০:৩০ টার দিকে, কেন্দ্রীয় সিউলের ইতাওয়ান জেলার হঠাৎ ভিড় করে। ভিড়ের চাপে শ্বাসরোধ ও পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১৫৩ জন। সেই ভিড়ের মধ্যে ছিলেন ৩২ বছর বয়সী নুহিল। রোববার বিবিসিকে তিনি তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানান।
দুর্ঘটনার উদ্ভট ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন নুহিল। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, সরু ঢালু রাস্তায় আটকে পড়েছেন অনেকে। তাদের অধিকাংশই কিশোর। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা আটকে পড়া লোকদের ভিড়ের মধ্যে থেকে বের করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। নিহতদের বেশির ভাগই শ্বাসরোধে মারা গেছে।
সিউলে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক নুহিল বলেন, “আমি গত ৫ বছর ধরে ইতাওয়ানে এই উৎসবে অংশ নিচ্ছি। তবে এবারের মতো এত ভিড় দেখিনি। গত বছরও এখানে অনেক পুলিশকর্মী কাজ করছিল। কিন্তু এই এ সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল খুবই কম, ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রস্তুতি ছিল না।
তিনি বলেন, পদদলিত হয়ে মানুষ চিৎকার করছিল। দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিল। আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। আমি অসহায় বোধ করছিলাম, আমার চোখের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে, এবং আমি দেখতে ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। আমরা বন্ধুদের নাম ধরে ডাকছিলাম, কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। পরে তিনি জানতে পারেন যে তার বন্ধুরা ভিড় থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছে।
নুহিল বলেন, একজন তার মৃত বন্ধুকে আধঘণ্টা ধরে সিপিআর দিয়ে যাচ্ছিল। তাকে থামানোর চেষ্টা করছিলেন আরেক বন্ধু, কিন্তু তাকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না।
এ ঘটনায় বিপুল সংখ্যাক মানুষ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নুহিল আহমেদ। তিনি যে এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যাবেন, এমনটা কল্পনাও করতে পারছিলেন না। তবে শেষ পর্যন্ত এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন তিনি।