Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / চোখের সামনেই দুই কোটি টাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গিলে নিলো পদ্মা (ভিডিও)

চোখের সামনেই দুই কোটি টাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গিলে নিলো পদ্মা (ভিডিও)

পদ্মা নদী বিশ্বের দ্রুততম প্রবাহিত নদীগুলির মধ্যে একটি। এই নদীতে প্রবাহিত পানির পরিমাণ, নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা এবং তলদেশের মাটির ধরন ক্ষেত্রে এই নদীর বিশালতাও অভাবনীয়। বিশ্বের দ্রুততম নদীর তালিকায় যত নদী রয়েছে তার মধ্যে সারা বিশ্বে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে অ্যামাজানের নদী। আর এই আ্যামাজান নদীর পরেই অবস্থান আমাদের বাংলাদেশের এই বহুল পরিচিত এবং ঐতিহ্যবাহী নদী পদ্মা নদী। তাই এই নদী বিশ্বের ভিতরে যেমন দ্রুততম স্রোত অববাহিকার মধ্যে অন্যতম একটি ঠিক তেমনি এর হিংস্রতাও বিশাল। প্রতি বছর এই নদী শত শত মানুষের হাসি-কান্নার একটি বিষয় বস্তু হয়ে থাকে।

অবশেষে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চর এলাকায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আজিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়টি কয়েক মিনিটের মধ্যেই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুরো ভবনটি নদীগর্ভে চলে যায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৌধুরী আওলাদ হোসেন বিপ্লব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিগার সুলতানা চৌধুরী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, চারতলা স্কুল ভবনের মাত্র এক তলা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল চত্বর এলাকা ভাঙনপ্রবণ হওয়ায় এক বছর আগে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। গত রোববারও তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে পুরো ভবনটি পদ্মা নদীতে তলিয়ে যায়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, এক বছর আগে আজিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠ পরিদর্শনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছিল যে, পদ্মার চরে অবস্থিত হওয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষায় তারা কোনো প্রকল্প গ্রহণ করবে না।

এরপর থেকে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে উন্নায়নের কাজ শেষ না করতে। তিনি বলেন, চারতলা ভবনটি নির্মাণে সরকারের প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৌধুরী আওলাদ হোসেন বিপ্লব জানান, বিদ্যালয়টি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০ জন। এর আগে ৬ কিলোমিটার দূরে এনায়েতপুর গ্রামে ৮৯ শতাংশ জমি ক্রয় করে কর্তৃপক্ষ। নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। তারা সেখানে পরবর্তী স্থাপনা করবে বলে জানিয়েছে। এবার এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে ৪৮ জন শিক্ষার্থী। তিনি আরো জানান, এটি চর অঞ্চলের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকে দায়ী করেন। সব ছাত্র যারা গত সপ্তাহে স্কুল করেছে। আজ ঘন জল দেখা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না!

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা এনজিও কর্মী নাসির উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের পাশে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়টির বেহাল দশা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি গত সোমবার প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা (এসি) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সর্বশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। পদ্মার পানির স্রোতের কারণে বিদ্যালয়টি কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে তলিয়ে যাওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলামের সাথেও তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং একটি টেক্সট মেসেজ পাঠানো হয়েছিল কিন্তু মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সায়েদুর রহমান জানান, চর এলাকার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, পদ্মা নদী একটি অ্যালুভিয়াল নদী, অর্থাৎ এটি পাললিক পাথরের মধ্য দিয়ে সাপের মতো একে বেকে প্রবাহিত হয়। পদ্মার এই বৈচিত্র্যময় চরিত্রের কারণে এটি একটি অদ্ভুত ও খামখেয়ালি নদীও বটে বলা চলে। এর খামখেয়ালি দ্রুততম গতি ধারার কারনে এর কিনারাগুলোও উল্লেখ জনক হারে ভেঙে যায়, যাকে স্বাভাবিক ভাবে আমরা নদী ভাঙ্গন হিসেবেই চিনি। এত বিশাল ও এই রকমের মাতাল নদীর কাছাকাছি কোন স্থাপনা এবং এর সংস্পর্শে বসবাস করাটা এই অঞ্চলের জনগনের কাছে রীতিমত সংগ্রামের মত, যার দৃষ্টান্ত উদাহারন এই ২ কোটি টাকার স্কুল। মাত্র কয়েক মিনিটেই পদ্মার গর্ভে চলে গেল গেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, এই ঘটনায় আবারো পদ্মার বিশালতার প্রমান দিল।

About Syful Islam

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *