মাঝে মধ্যেই দেশের প্রায় সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের একই দাড়িপাল্লায় মেপে থাকেন অনেকেই, কিন্তু এটা একদমই ঠিক নয়। এমনও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের কারণে এখনো পুলিশের মান অক্ষুন্ন রয়েছে। আর তাদের মধ্যে অন্যতম এক নাম এএসআই আবদুল কাদির। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি যেন এক আস্থার নাম।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এই আবদুল কাদিরের হারানো মোবাইল খুঁজে বের করা তার অন্যতম নেশা। গত আট বছরে তিনি ৪৫০০ টিরও বেশি চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল খুঁজে পেয়েছেন।
পুলিশ বিভাগ থেকে তিনি ইতিমধ্যে ২২ বার পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০১৯ সালে, তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘আইজিপি ব্যাচ’ পান।
হারানো মোবাইল ফোন কীভাবে পুনরুদ্ধার করবেন, কীভাবে হারাবেন না, পুরনো মোবাইল কেনা-বেচা সংক্রান্ত তথ্য এবং হারিয়ে গেলে কী করবেন-সহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।
এএসআই আব্দুল কাদির: ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের এক রাতে। আমি তখন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলাম। এ সময় এক নারী কাঁদতে কাঁদতে থানায় প্রবেশ করেন। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, মহাখালী এলাকা থেকে ফেরার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তার মোবাইল ফোন হারিয়েছে। যেভাবেই হোক, পুলিশ তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দেয়।
শুধু মোবাইল ফোনের জন্য মহিলাকে কাঁদতে দেখে কৌতূহলী হই । আমি জানতে চাই মোবাইলে কি আছে, যার জন্য সে এত কাঁদছে? জবাবে ওই নারী বলেন, হারানো মোবাইল ফোনটি তার বাবার শেষ স্মৃতি। তার বাবা ফোনটি কিনেছিলেন। বাবার সঙ্গেও তার অনেক ছবি রয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগে তার বাবা মারা যান। তাই বারবার মোবাইলে বাবার শেষ স্মৃতি দেখতেন ওই নারী। চরম মমতার সাথে মোবাইল ফোন রেখে দিতেন। বলেই আবার কাঁদতে লাগলো।
ওই নারীর কান্না দেখে মনে দাগ কাটে। মনে মনে ঠিক করলাম যেভাবেই হোক ওর মোবাইলটা উদ্ধার করব। আমি নিজ উদ্যোগে ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। জিডির কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র ডিবি অফিসে পাঠিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রায় তিন মাস পর বরিশাল থেকে ওই নারীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। হারানো মোবাইল ফোন পেয়ে সেদিন খুশিতে কেঁদেছিলেন তিনি।
এএসআই কাদির: কারও মোবাইল ফোন যদি হারিয়ে যায় সেটি তার আবেগ এবং স্মৃতি। একজন মানুষের কোনো স্মৃতি হারিয়ে গেলে সেই ব্যক্তির কষ্টের শেষ থাকে না। একজন ব্যক্তি যখন হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের বিষয়ে থানায় আসেন, তখন তার চেহারা দেখে বোঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে গেছে। এদিক থেকে আমি মনে করি, মানুষের হারানো মোবাইল ফেরত দিতে পারলে ভুক্তভোগীরও উপকার হবে, আমারও ভালো লাগবে।
এএসআই কাদির: শখের বশে অনেক সময় পারসোনাল কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি/ভিডিও সংরক্ষণ করেন অনেকে। কিন্তু মোবাইল ফোন যখন হারিয়ে যায় তখন ওই ভুক্তভোগী মোবাইলের চেয়ে বেশি চিন্তা করেন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি/ভিডিও নিয়ে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, কখনো পারসোনাল কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি/ভিডিও মোবাইলে সংরক্ষণ করা উচিত নয়।
কেননা অনেক সময়ে এমনটাও হয়ে থাকে যে, মুঠো ফোনে থাকা ব্যক্তিগত নানা ছবি কিংবা ভিডিও নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে থাকেন অনেকেই। আর এর ফলে আরো বিপাকে পড়তে হয় ভুক্তভুগীদের। তাই এই বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।