আড়াই মাসের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সব বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রোডম্যাপে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ এবং ফলাফল গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ৯৪টি কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি রোডম্যাপে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঁচটি কাজ শেষ করে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তফসিল রাখা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটগ্রহণ হতে পারে। এ জন্য নভেম্বরের শুরু বা মাঝামাঝি সময় নির্ধারণ করবে কমিশন।
সূত্র জানায়, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ে বিজি প্রেস থেকে নির্বাচনী মনোনয়নপত্র, জামানত জমার রশিদ, মনোনয়নপত্র জমা-বাছাই ফরম বিতরণ করা হবে। এরপর নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার-ব্যানারসহ সবকিছু অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হবে। এরপরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে, নির্বাচনের তফসিল ও সময়সূচী জারির পরের দিন রাজনৈতিক দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা সমমানের পদধারীর স্বাক্ষর সংক্রান্ত তথ্য দিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেবে ইসি। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দুই দিন আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে ইসি। এছাড়া একাধিক রাজনৈতিক দল যৌথভাবে প্রতীক বরাদ্দ দিতে ইচ্ছুক হলে তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদনের সুযোগ দিতে চিঠি দেবে ইসি। তফসিল ঘোষণার দুদিন পর নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহ পর নির্বাচনী কাজে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের খরচ বহনের জন্য প্রথম ধাপের তহবিল বরাদ্দ ও অনুমোদন দেবে কমিশন।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের একদিন পর ইসি সচিবালয় নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য সরকারি প্রিন্টিং প্রেসকে প্রিন্টিং আদেশ জারি করবে। এ ছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ডিসি-এসপিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সভা করবে ইসি।
ভোট গ্রহণের ২০ দিন আগে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে; ১৫ দিন আগে ভোট কেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ হবে; ভোট গ্রহণের ১২ দিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে ইসি। এদিকে এবার ভোট গ্রহণের ১১ দিন আগেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। ভোটের ১০ দিন আগে পোস্টাল ব্যালট পেপার দেওয়া হবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে। ভোটের ১০/১২ দিন আগে শুরু হবে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কাজ। এবারের নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতা ঠেকাতে ভোট গ্রহণের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ১৫ দিন মাঠ পর্যায়ে রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসি। ভোটের ৮/৯ দিন আগে ব্যালট পেপার ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী জেলা সদরে পাঠানো হবে।
এ ছাড়া ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দুই দিন পর ফলাফল গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়ে পাঠাবে ইসি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেছে ইসির কর্মপরিকল্পনা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এ নির্দেশনা দেবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে একাধিক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, সংঘর্ষ ও সহিংসতার কথা বিবেচনা করে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও ১৫ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।