খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি মুদ্রার সামনে-পিছন দু’পিঠ-ই দেখে ফেলেছেন। গত জুলাই মাসের দিকে জিম্বাবুয়ে সফর করার মাধ্যমে স্পিন বোলিং উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহনের পর বাংলাদেশের টাইগারদের জয়ের ধারা দেখতে আরম্ভ করেন রঙ্গনা হেরাথ। এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে যে আনন্দ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল সেটা উবে গিয়ে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে করা ফলাফল বি;ষাদে পরিণত হয়েছে। সুপার টুয়েলভে মনোবল হারিয়ে ফেলা দলটি কোচদের সামনের কঠিন পথও দেখিয়ে দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচের আগে ভার্চুয়ালি প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনের আগে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তিও উত্তাপ অনুভব করেছিলেন, “আমাদের ভবিষ্যতে কীভাবে উন্নতি করতে পারি তার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।” তবে এই পারফরম্যান্সও কোচদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ‘
রাসেল ডোমিঙ্গো সেই নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন কিনা তা নিয়ে মানুষের মনে গভীর সংশয়ই ছিল। মাহমুদ উল্লাহ বিশ্বকাপে আসার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের সঙ্গে পরবর্তী দুই বছরের চুক্তির সব শর্ত চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুধু বাকি ছিল চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা। বলা হয়েছিল বিশ্বকাপ অভিযানের পর ঢাকায় ফিরবেন ডমিঙ্গো এবং সেই সময় তিনি স্বাক্ষর করবেন। তবে, দলের পারফরম্যান্সের উত্তে’জনাপূর্ণ পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের সাথে হোম সিরিজের আগে অনুশীলন ক্যাম্পের সময়সূচি ঠিক করা নিয়ে বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার সাথে তার বিরো’ধের ঘটনায় নতুন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনেক কথা ছিল।
যদিও এসবের কিছুই ডমিঙ্গোর দুই বছর মেয়াদি নতুন চুক্তির পথরোধ করতে পারেনি বলেই জানা গেছে। এরই মধ্যে এই প্রোটিয়া কোচ চুক্তিতে নিজের সই দিয়ে ফেলায় নেই আর কোনো অনিশ্চয়তাও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল ব্যাটিংয়ে চরম ব্যর্থ হওয়ার আগেই ডমিঙ্গো তাঁর বাংলাদেশে থেকে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র, “প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা অফার লেটার দিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ফাঁকা ছিল কেবল ‘একসেপ্টেড বাই রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো’ অংশটিই। শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের পরদিন ওই জায়গায় ডমিঙ্গোর সাইনও নেওয়া হয়ে গেছে।’’
সে জন্যই কিনা দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগের দিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করার লক্ষ্য নিয়েই তাঁকে বেশি উচ্চক’ণ্ঠ হতে দেখা গেছে, ‘এক বছরের মধ্যেই আরেকটি বিশ্বকাপ আছে। এর মধ্যেই সব ঠিকঠাক করতে হবে।’ চুক্তিতে দুই পক্ষই সই করে দেওয়ায় আগামী বছর অক্টোবর-নভেম্বরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত সব ঠিক করার দায়িত্ব থেকে ডমিঙ্গোকে সরানোরও আর কোনো উপায় থাকল না। কারণ এই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী দুই বছরের চুক্তির প্রথম এক বছর যে ‘গ্যারান্টিড’।
এই সময়ের মধ্যে কেউ ছেড়ে যেতে পারবে না কাউকেই। অর্থাৎ বিসিবিও পারবে না তাঁকে চাকরিচ্যুত করতে। আবার ডমিঙ্গোও চাইলে নোটিশ দিয়ে চাকরি ছাড়তে পারবেন না। অবশ্য ডমিঙ্গোকে তাড়ানোর কিংবা তাঁর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত আছে চুক্তিতে। তবে সে ক্ষেত্রে গুনতে হবে বড় অঙ্কের ক্ষ’তিপূরণ। ধরুন, সাত মাস পর এই দক্ষিণ আফ্রিকানের মনে হলো তিনি আর চাকরি করবেন না।
এরপর তাকে বাকি পাঁচ মাসের বেতন বুঝিয়ে দিতে হবে বিসিবিকে। এর পরিমাণ হবে প্রতি মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার এবং তারপর সেটা হবে ৮৫ হাজার ডলার। একইভাবে, বিসিবিও যদি তাকে বরখাস্ত করতে চায় তবে তাদের একই পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
যেহেতু এটি উভয় পক্ষের জন্য একটি বিশাল ক্ষতির দিক, তাই প্রথম বছরে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যেটা আছে, অস্ট্রেলিয়ায় পরবর্তী বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য ডোমিঙ্গোকে নিয়ে থাকতে হবে দলকে। নতুন এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। দুই বছর পূর্বে যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলে সেখানে স্টিভ রোডস যিনি ইংলিশ কোচ ছিলেন তাকে তিন ম্যাচ জেতার পরও চাকরি হারাতে হয়েছিল, সেখানে আরেকটি বিশ্বকাপেও মূল পর্বে এখনও পর্যন্ত জয় না পাওয়া ডমিঙ্গোর দরজায় নতুন চুক্তির সৌভাগ্য এসে হাজির হয়েছে।