বগুড়ার ধুনটের জমজ তিন ভাই মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে এক ভাই গত বছর সুযোগ পেয়েছিলেন, বাকি দুই ভাই এবার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু এক সময় তাদের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভালো চিকিৎসার অভাবে মারা যান। তারা তিনজনই ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরে বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
তিন জমজ ভাইয়ের মধ্যে মো. মাফিউল হাসান গত বছর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এবং এবার মো. সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে এবং মো. রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।
ধুনট নবীর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, সোমবার তিন ভাই একসঙ্গে স্কুলে আসেন। শিক্ষকদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। তারা মিষ্টি এনেছে। তাদের চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া আমাদের স্কুলের গৌরব ও সুনাম।
ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, সোমবার তিন ভাই একসঙ্গে স্কুলে আসে। শিক্ষকদের কাছ থেকে দোয়া চায়। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। তারা মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। ওদের মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া আমাদের স্কুলের গৌরব ও সুনামের।
তাদের মা আরজিনা বেগম বলেন, “২০০৯ সালে তাদের বাবা গোলাম মোস্তফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন তাদের বয়স পাঁচ মাস। তারা বাবার আদর ও মমতা পায়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার তিন সন্তানকে লেখাপড়া করতে সমস্যায় পড়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, নিজে কষ্ট করে জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। প্রায় ৫ বিঘা জমি ছিল। বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করে ওদের পিছে লাগিয়েছি। প্রয়োজনে বাকিটা বিক্রি করে দেব। তারপরও তাদের ডাক্তার বানাবো। আমাদের মত গরীব মানুষের সেবা করা। আমি যে কতটা খুশি তা প্রকাশ করতে পারব না। গ্রামের মানুষ তাদের দেখতে এলে বুক ভরে যায়।
২০২৩ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ভর্তি হওয়া মাফিউল হাসান বলেন, “তিন ভাই বগুড়ায় একটি মেসে থেকে একই সঙ্গে শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়েছে। কখনোই আমাদের কষ্ট করতে দেননি।”
তিনি আরও বলেন, ‘বথুয়াবাড়ি গ্রামের মধ্যে আমরাই প্রথম মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এর আগে আর কেউ সুযোগ পায়নি। খুবই ভালো লাগছে আমরা তিন ভাই ডাক্তার হব।’
নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাওয়া রাফিউল ইসলাম জানান, অসুস্থ অবস্থায় তার বাবা মারা যান। বিষয়টি জানতে পেরে তিন ভাই ডাক্তারি পড়ার প্রতিজ্ঞা করেন। গরীব মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের চিকিৎসা করবো। বাবার মতো কেউ যেন অকালে মারা না যায়।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া শফিউল বলেন, আজ বাবা থাকলে কত খুশি হতেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এখন মা আমাদের বাবার অভাব পূরণ করেছেন। আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি সবার কাছে এই দোয়া চাই।