সাকিবুল ইসলাম রানা যিনি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে যেটা নিয়ে রাজশাহীতে বেশ তোলপাড় করা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং এই বিষয় ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচন। ওই অডিওতে তিনি এক নারী কর্মীর সাথে কথা বলেছিলেন বলে জানা যায়। এই অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সেটা অনেকের নিকট চলে যায়।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকে ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই অডিওতে ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়া সাকিবুল ইসলাম রানা বলেন, তিনি চিটারি করে সভাপতি হয়েছেন। তিনি সব চিটারদের বস। ওই অডিওতে টাকা ও সহ-সভাপতি পদের জন্য এক মহিলা কর্মীর সঙ্গে তার শারীরিক খারাপ কাজের কেলেঙ্কারির ইঙ্গিতও রয়েছে।
এখানে পাঠকদের জন্য কথোপকথনটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
মহিলা কর্মী: হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
রানা : তুমি আমার সঙ্গে নাটক করিচ্চো তাই না?
নারী শ্রমিক: কিসের নাটক ভাইয়া?
রানা: তোমার কথা আর কাজের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
নারী কর্মী: কিন্তু আমার কথা ও কাজের সব সময় মিল তো থাকে।
রানাঃ কই আজ কার সঙ্গে ঘুরতে গেলা, বললা ভাইয়া…
মহিলা কর্মী: বুঝলাম না
রানা: তুমি কার সঙ্গে গেলা, বললা এডা আমার ভাইয়া। তোমার তো ভাইয়াই নাই। এইডা হইলো?
নারী শ্রমিক: কে বলল?
রানা: শোন, আমার চোখ সব জায়গায় থাকে… এভাবে ঠকাতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেডিডেন্ট হইছি…। আমি সকল চিটারদের নেতা।
মহিলা কর্মীঃ হ্যাঁ ভাইযা।
রানা: তুমি না আসলে, কাউকে পাঠাতে চাইলে… সে কই?
মহিলা কর্মী: আমি তো ব্যস্ত ছিলাম। এর জন্যই তো হয় নাই।
রানা: এখন কোথায়?
মহিলা কর্মীঃ আমি বাসায় আছি ভাইযা।
রানা: তুমি যে বাসায় চইলা গেলা, নিজে শান্তি পাইলে সব শান্তি। আর আমরা এভাবেই থাকি, নাকি? তোমাকে কত বিশ্বাস করি তুমি বলো তো।
মহিলা কর্মী: আমি সবসময় বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করি।
রানা: তুমি যার সাথে আড্ডা দাও। তার চেয়ে বড় নেত্রী হলে মানুষ এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না, বুঝতে পারছ না?
মহিলা কর্মী: জ্বি… ভাইয়া। এখন ত্রিশা আপু কি সত্যিই আমার জন্য খারাপ?
রানা: আমি মসজিদে গিয়ে বললে কী বিশ্বাস করবে?
মহিলা কর্মী: ছি … ছি… ভাইযা। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। এর জন্য আপনাকে এতদূর যেতে হবে না।
রানা: তাহলে কেউ চায়, তার চেয়ে তুমি বড় হও।সে সাংগঠনিক। তুমি পার্টির যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট হও, তার চাইতে দ্বিগুণ রাস্তা ওপরে তোমার। যুগ্মদের চাইতেও সিনিয়র তুমি…।
মহিলা কর্মী: আমি তো আপনার কথামতো তৃষা আপুকে ছেড়ে দিলাম ভাইয়া। কিন্তু আপনাকে মেইনটেন যে করব, মানে একটা ব্যবহার আমার খুব খারাপ লেগেছে।
রানা: আমাকে তুমি মেইনটেন করবে, আমি তো সরাসরি বলেছি। তোমার ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট লাগবে আমি দেব। আমার কোন ন্যাচার খারাপ লাগল বলো?
মহিলা কর্মী: আছে তো অনেক কারণই আছে।
রানা: শান্ত?
মহিলা কর্মী: অবশ্যই শান্ত ভাইয়ার ব্যবহার। সেই দিনের ওইটা আমার খারাপ লেগেছে।
রানা: ওই যে তুমি বলছিলা, তোমার আরও লাগবে। তাই ভাবলাম তুমি একটু সুখে থাকো, খুশি থাকো।
মহিলা কর্মী: এগুলো তো ভাইয়া অবান্তর কথা। আর আমার ফাইনান্সিয়াল সাপোর্টের কোনো প্রয়োজন নেই। সংগঠনটাকে ভালোবেসেই আমি আসছিলাম।
রানা: তাহলে শোনো, শান্ত-মান্ত কেউ থাকবে না। আমি একা…
মহিলা কর্মী: তো ভাইয়া আপনি মেয়ের কথা কালকে বলছিলেন, যেটা ছবি পাঠিয়েছিলাম। এখন আপনি বললে তাহলে…
রানা: দেখো তো পাঠাতে পার নাকি।
মহিলা কর্মী: এখন ভাইয়া উনিও তো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে।
রানা: কেবল তো ৮টা বাজে… রে। রাত হয়নি। একটু ফোন দাও দ্রুত। দিয়ে দেখো তো…। কেউ যেন না জানে।
মহিলা কর্মী: না না কে জানবে! আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন।
রানা: কী রকম ভরসা করি দেখো না?
মহিলা কর্মী: জ্বি ভাইয়া।
এই অডিও রেকর্ডিং সম্পর্কে কথা বলতে চাওয়া হলে সাকিবুল ইসলাম রানা ফোন ধরেননি। তিনি ইচ্ছা করেই এমনটি করেছেন বলে মনে করা হচ্চে। খবর নিয়ে এই ঘটনার সম্পর্কে জানা গেছে, কথোপকথনে অপর পাশে থাকা ওই নারী তেমন সাধারণ কেউ নন তিনি জেলা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।