গত কয়েক মাস ধরে পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের কতো কি কান্ড গন মধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপিকে নিমন্ত্রন, সন্তানের নাম পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে রাখা ইত্যাদি, তবে এবর ভিন্ন এক কান্ড নিয়ে হাজির হাসান-তৃমা নামে এক যুবক-যুবতী।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে। এ সেতু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের নানা আবেগ-অনুভূতি জড়িত। তবে হাসান ও ত্রিমার গল্পটা একটু ভিন্ন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন বিয়ের অপেক্ষায় ছিলেন তারা! সাভারের বাসিন্দা হাসান মাহমুদের প্রেমে পড়ে গোপালগঞ্জের মেয়ে সারগিনা হোসেন ত্রিমা। কয়েক দশক আগে দুজনের মধ্যে পরিচয়ের পর মন দেওয়া-নেওয়া হয়।
প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে হাসান মজা করে ত্রিমাকে বলেন, ফেরি করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বিয়ে করা কঠিন হবে। কয়েকদিন পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর হাসান পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ত্রিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ত্রিমাও রাজি।
হাসান-তৃমার সম্পর্কের কথা দুই পরিবারই জানে। তবে দুই পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ের পেছনে ছুটছিলেন। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের তারিখের পরিকল্পনার কথা জানানো হলে উভয় পরিবারই নড়েচড়ে বসে। এ প্রসঙ্গে হাসান গণমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “অভিভাবকের চাপ সত্ত্বেও আমি আমার পরিকল্পনায় অটল আছি। বলা যায় বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। ত্রিমা আমাকে সমর্থন করে।
ত্রিমা বলেন, “আমরা দুজনেই একটা জিনিস ভেবেছিলাম। আমরা অনেক দূর এসেছি। তাই আমরা আমাদের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের পরিকল্পনায় লেগে থাকি। 2020 সালের 10 ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান স্থাপনের পর হাসান-ত্রিমার চোখ খুশিতে ঝলমল করে ওঠে। এবার পারিবারিক পর্যায়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এগিয়ে নিতে শুরু করেছেন তারা। চলতি বছরের ২৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে ঘোষণা করা হলে।এরপর এই ঘোষণা আসে হাসান-ত্রিমার বিয়ের তারিখ হিসেবে।
একদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার, অন্যদিকে দুই পরিবারে হাসান ও ত্রিমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ১৪ জুন সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো আলোকিত হয় পুরো পদ্মা সেতু। ১৭ জুন সন্ধ্যায় হাসানের লাশ পাওয়া যায়। ত্রিমা গায়েহলুদ ২৪ জুন ঢাকায় থাকবেন। তার জন্য এখন প্রস্তুতি চলছে।
হাসানের ঘনিষ্ঠ সজিব মিয়া হাসানের লাশের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন: পদ্মা সেতুর আলো জ্বলছে, এবার হাসান ভাইয়ের হলুদ-সন্ধ্যায় আলো!
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে হাসান তাকে লিখেছেন, “আমি স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ২৫ জুন বিয়ের পরিকল্পনা করেছি। সকলের দোয়া কামনা করছি। হাসান যোগাযোগের মাধ্যমে বিয়ের কার্ড পোস্টে দিয়েছেন। কার্ড অনুযায়ী, বিয়ে ২৫ জুন। বিয়ের রিসেপশন ১ জুলাই।
কার্ডটিতে লেখা আছে, আমাদের যৌথ জীবনের জন্য শুধু আশীর্বাদ ও ভালোবাসাই কাম্য। কার্ডের নিচের অংশে দুই পাশে পদ্মা সেতুর প্রতীকী অলংকার রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাসান প্রথম আলোকে বলেন, “বিয়ের কার্ডের আইডিয়া আমার। আমি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি কার্ড তৈরি করেছি। কার্ডে আমি ঐতিহ্যবাহী জামদানি ব্যবহার করেছি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনকে কেন্দ্র করে আমাদের বিয়ের পরিকল্পনা। তাই পদ্মা সেতুর প্রতীকী অলংকরণ কার্ডে রাখা হয়েছে। এই কার্ড সেতুবন্ধনের বার্তা দেয়।
ত্রিমা বলেন, পদ্মা সেতু সংযোগের মাধ্যম। এই সেতুটি সাহস, অধ্যবসায়, বিজয়ের প্রতীক। আমাদের প্রেম থেকে বিয়ে পর্যন্ত দীর্ঘ পথচলা হতে চলেছে সাহস-সংকল্প-বিজয়ের গল্প।
হাসান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করছেন ত্রিমা। তদের এমন কর্মকান্ডে নেটিজেনদের অনেক ট্রোলের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া অনেকে তাদের অভিনন্দন ও জানিয়েছেন।