পাঁচবার সময় বাড়ানো সত্ত্বেও বরাদ্দ কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ৪৪ হাজার ২৩২টি কোটা শূন্য রেখে হজযাত্রী নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান নিশ্চিত করেছেন যে তিনি মঙ্গলবার সরকারি ও বেসরকারি নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে সৌদি সরকারকে চিঠি দিয়েছেন।
হজ চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত ৮২ হাজার ৯৬৬ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ২৬০ জন। আর বেসরকারিভাবে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৭০৬ জন। ফলে শূন্য রয়েছে ৪৪ হাজার ২৩২টি কোটা।
কোটা খালি থাকলেও নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী। গত ১৫ নভেম্বর হজ নিবন্ধন শুরু হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এতেও কোটা পূরণ না হওয়ার চারটি কারণকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা। কারণগুলো হলো হজ প্যাকেজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, জাতীয় নির্বাচনের কারণে হজ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, ওমরাহকে হজের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা এবং নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি।
হজ ব্যবস্থাপনায় এমন পরিস্থিতি কেন, এ প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি সরকারের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারে যাবেন নাকি? আলু, পেঁয়াজ ও সবজি কিনবেন? অনেকে হজের টাকা ভাঙিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কারণ, পরিবারের ভরণপোষণ হজের চেয়েও বড় দায়িত্ব। সেটা ফরজ।
বেসরকারি সংস্থার মালিকদের সংগঠন হাব এবং হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত। জানতে চাইলে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হজের সিদ্ধান্ত সাধারণত পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবার হজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন কয়েকজন। আরেকটি বিষয় হলো, অনেকেই ওমরাহকে হজের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন। বিশেষ করে করোনা মহামারীর দুই বছর পর সীমিত পরিসরে হজ শুরু হলেও সৌদি সরকার সেখানে বয়সের শর্ত আরোপ করে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হজের খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে হজের পরিবর্তে বয়স্ক হাজীরা ওমরাহ পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
তবে হাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার মনে করেন, হজ প্যাকেজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও নিবন্ধন কম হওয়ার একটি বড় কারণ। তিনি বলেন, একই দূরত্বে ওমরাহর জন্য বিমান ভাড়া ৭০-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু হজে বিমান ভাড়া দুই লাখ টাকা। তাই অনেকেই হজের পরিবর্তে ওমরাহ করতে যান।
এ ছাড়া সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন হজ এজেন্সি মালিক। নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যে, যাদের হজ করতে হতো তারা আর সেই অবস্থানে নেই। হজের জন্য জমানো টাকা ভেঙ্গে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেন অনেকে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত হজ প্যাকেজের দাম গতবারের চেয়ে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা কম। সরকারি সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। প্রাইভেট ন্যূনতম প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।