আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপি চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। রোববার নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক সভায় তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করার পর এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শমসের মবিন চৌধুরীর প্রার্থিতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ছাড়াও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারোয়ার হোসেন ১৫ বছর ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি কানাডা থেকে এসে দিনরাত মাঠে কাজ করছেন। সম্প্রতি এ আসনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফছার খান সাদেকের নাম আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী। আলোচনায় রয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম পল্লবও। এছাড়াও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর শফি চৌধুরী এলিম এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন আহমেদ হাসিব, নিউজার্সি শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদও প্রার্থী।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক হুইপ সেলিম উদ্দিনও এ আসনে লড়তে চান। আওয়ামী লীগসহ দলের প্রার্থীরা দিনরাত মাঠে কাজ করছেন, এমন সময় হঠাৎ করেই উঠে এসেছে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর নাম। তিনি প্রতি সপ্তাহে এলাকা পরিদর্শন করছেন। সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ। সিলেট-১ আসনে তার নির্বাচন করার কথা থাকলেও নিজ এলাকার আসনেই নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, তার দল শিগগিরই সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবে। রোববার বিকেলে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগ গ্রামে নিজ বাড়িতে বিয়ানীবাজার মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আর তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল বিএনপি। তিনি আরও বলেন, আমার রাজনীতি মানুষের কল্যাণে। আমি সব সময় তৃণমূলের মানুষকে ভালোবাসি। আমি তাদের সুখ-দুঃখের সারথি হবো। এর আগে শমসের মবিন চৌধুরী ভাদেশ্বর মোকামবাজার শাহ পুতলা জামে মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করেন। এরপর স্থানীয় উপাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও দক্ষতা বিনিময় করেন। পরে মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিয়ানীবাজার জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, তৃণমূল বিএনপির সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক এম এ হান্নান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ছানা মিয়াসহ দলের কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। 8 ডিসেম্বর, ২০১৮-এ তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে যোগ দেন। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার মনোনয়নপ্রত্যাশী হন তিনি। তবে নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এরই মধ্যে নিজ দলের মধ্যে চাপে রয়েছেন। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে নাহিদ ছাড়াও আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। এবার নাহিদের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের শমসের মবিন চৌধুরী।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হলে আওয়ামী লীগ আসনটি পুনরুদ্ধার করে। ২০০১ সালে আবারও আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে নাহিদ চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানকে পরাজিত করে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন। এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমি সব সময় এলাকার মানুষের পাশে আছি। গত বিশ বছরে যা হয়েছে তা অতীতে হয়নি। সব উন্নয়নের কথা বলা যায় না। এলাকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেছে। ক্রমাগত উন্নয়ন অব্যাহত আছে।