ইউপি নির্বাচন নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের মজার মজার ঘটনা আমাদের সমানে আসছে। অনেক প্রকার সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এর আগেই আমরা একই পরিবার থেকে নানান ক্যান্ডিডেটের খবর শুনেছি। তবে এ এক বিরল ঘটনা। যেখানে জামাই-শশুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পাশাপাশি চাচা-ভাতিজার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তাও আবার আত্মীয় সবাই সবার।
এক ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য প্রার্থী চারজন। তারা দুটি পরিবার থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এক পরিবারে রয়েছে চাচা-ভাতিজা, আরেক পরিবারে জামাই-শ্বশুর। দুই পরিবারের দুইজন চাচা ও শ্বশুর দীর্ঘদিনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বাকি দুজন ভাতিজা ও জামাই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
আরও অনেক মিল রয়েছে তাদের মধ্যে। চাচা-ভাতিজার বাড়ি একই গ্রামে। আবার জামাই-শ্বশুরের বাড়িও একই গ্রামে। এমন পারিবারিক ভোটের আমেজ বইছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে। দুই পরিবারের চারজন প্রার্থীর এই ভোটযুদ্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভোটারদের মাঝে।
নেজামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের চার প্রার্থী হলেন, গোসাইপুর গ্রামের মৃত আলবক্স মণ্ডলের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল খালেক ফিটু (৬০), তার ভাতিজা সাফিউল আলম সেলিম (৩৮), কাজলকেশর গ্রামের মৃত ইসমাইল মণ্ডলের ছেলে বর্তমান ইউপি সদস্য তোসলিম উদ্দীন (৫০) এবং তার আপন ভাইয়ের জামাই মো. আলী হোসেন (৪২)।
তাদের মধ্যে চাচা আবদুল খালেক ফিটু ১৪ বছর এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। পেশায় কৃষি কাজ করেন তিনি। আবদুল খালেক ফিটু নাচোল উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘ দিন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোরগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুল খালেক ফিটু। তার আপন ভাতিজা সাফিউল আলম সেলিমের প্রতীক টিউবওয়েল। তিনি এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। চাচার বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিলেও চাচার মতোই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কাজলকেশর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য তোসলিম উদ্দীন টানা ১১ বছর ধরে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। প্রথমবার পরাজিত হলেও পরের দুইবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। স’মিলের মালিক শ্বশুর তোসলিম উদ্দিনের প্রতীক ফুটবল। তার জামাই আলী হোসেন এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার প্রতীক বৈদ্যুতিক পাখা।
চায়ের দোকানদার সাদিকুল ইসলাম। তার দোকোনে চার প্রার্থীরই পোস্টার লাগানো রয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের চাইতে চাচা-ভাতিজা, জামাই-শ্বশুরকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। একটি পরিবারে এমন হলে সাধারণত সমালোচনা হয়। কিন্তু যেহেতু দুটি পরিবারে এমন ঘটনা তাই যোগ্যতা, অযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করছে ভোটাররা। এখন পর্যন্ত (১৮ ডিসেম্বর) আমাদের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
বর্তমান ইউপি সদস্য শ্বশুর তোসলিম উদ্দিন জানান, টানা ১১ বছর ধরে আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করে আসছি। এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, সেতু নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছি। এছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ভূমিকা নিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে জনগণ ইনশাল্লাহ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন।
একই গ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জামাইকে নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে আলী হোসেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সম্পর্কে সে আমার জামাই। সে আমার আপন ভাতিজির স্বামী। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে পারিবারিক সম্পর্কে কোনো ব্যতয় ঘটবে না। ২৬ ডিসেম্বর জনগণের দেওয়া রায় মেনে নেব।
জামাই আলী হোসেন বলেন, জনগণ নতুন কাউকে চাই। জনগণের সেই চাহিদা থেকে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। একই গ্রামে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার শ্বশুর। আমার বাড়ি থেকে তার বাড়ি দেখা যায়, এত অল্প দূরত্বে আমাদের বাড়ি। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভালো রয়েছে। আশা করি, নির্বাচনের পরও তা অটুট থাকবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার আট ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে। এলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জিতবে কে সেটা বলা না গেলেও ট্রফিটা যে নিজেদের ঘরে থাকতেছে তা আর বলার উপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার পালা নির্বাচনের পরে রেজাল্ট কি আসে জামাইয়ের জোর বেশি নাকি শশুরের জোর বেশি আরেকদিকে চাচার জোর বেশি নাকি ভাতিজার জোর বেশী। তবে নির্বাচন নিয়ে নিজেদের ভিতরে কোন দ্বন্দ্ব নেই তাদের ভিতর।