গতকাল দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ঈগল পরিবহনের একটি নৈশকোচে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে গেলে বাসে ওঠা ১০-১২ জন ডাকাত সদস্য যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা সব কিছু লুট করে নেয়। সেই সময় বাসের এক নারী যাত্রীর সাথে খারাপ কাজ করে ডাকাতদলের ৬ সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত থাকা রাজা মিয়া নামের একজন ডাকাত দলের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার তার সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এর আগে সকালে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রাজা মিয়াকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে চুরি হওয়া তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাল্লা গ্রামের হারুন-অর-রশিদের ছেলে। টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়ায় থাকেন তিনি। তিনি পেশায় টাঙ্গাইলের ঝটিকা নামক বাসের চালক।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, রাজা মিয়া ডা’কাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও তিনি খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে আজ তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, বাসটি ২৪ জন যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সিরাজগঞ্জের কাছে দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবারের জন্য বাস থামে। পরে দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ রোড থেকে ৪ জন যাত্রী উঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর আরো তিনজন উঠে। এরপর কড্ডার মোড় থেকে আরও তিনজন বাসে ওঠেন। সবাই তখন প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর গাড়িতে থাকা ডাকাতেরা একে একে সব যাত্রীকে অ”স্ত্রের মুখে বেঁধে ফেলে।প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর আটক রাজা মিয়া বাসের চালককে উঠিয়ে দিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন বাসটি। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা লুট করে। এরপর পেছনে বসা এক নারীকে খারাপ কাজ করে ডাকাত দলের ছয় সদস্য।
ওই সময় গাড়িতে আরও কয়েকজন মহিলা ছিলেন বলেও জানান পুলিশ সুপার। তাদের সঙ্গে ছোট ছোট সন্তানেরা ছিল। হয়তো সে কারণেই তারা রক্ষা পেয়েছে। দলটি বাসটি নাটিয়াপাড়ায় নিয়ে যায়। পরে তারা সেখান থেকে ঘুরে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের সামনে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার বাস যাত্রী হেকমত আলী বাদী হয়ে অজ্ঞা’ত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মধুপুর থানায় ডাকাতি ও নারী সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করেন।
পুলিশ সুপার জানান, রক্তিপাড়ার কাছেই ডাকাত দলের সদস্য রতনের মামার বাড়ি। আমরা জানতে পারি যে ডাকাত দল বাস থেকে নেমে রতনের মামার বাড়িতে যায়। তারপর তারা সেখান থেকে তাদের আলাদা আলাদা পথে চলে যায়। আমরা এখন পর্যন্ত সকল ডাকাতকে গ্রেফতার করতে পারিনি কিন্তু শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। একজনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি যে আমাদের সকল তথ্য দিয়েছে। আশা রাখছি খুব তাড়াতাড়ি অন্য যেসব সদস্য রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারব।